পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । ©ጫ❖ করুণার মূৰ্ত্তি। অথবা, বিরহ-বিধুর সাক্ষাৎ বিষাদ-রূপিণী। তিনি বৃন্তছিন্ন কিশলয়ের স্থায় বিমলিন, দারুণ দীর্ঘ শোকে তাহার হৃদয়কুসুম বিশুষ্ক, শরৎকালীন কেতকী কুসুমের গর্ভপত্রের ষ্ঠায় তাহার শরীর ক্ষীণ, পাণ্ডুবর্ণ ও ক্লাস্তিযুক্ত। বিষ্কম্ভকে বাসস্তীর সহিত মুরলার যখন এইরূপ কথাবাৰ্ত্ত হইতেছে, সেই সময় সীতাদেবী তাহদের নিকট উপস্থিত হন। তখন পঞ্চবটী-দর্শনে শ্রীরামচন্দ্রের প্রাণ বড়ই বিচলিত হইয়াছে। তিনি দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিতেছেন,—‘পঞ্চবটী দর্শন করিয়া আমার অন্তরস্থিত শোকানল ঘনীভূত ধূমের ন্যায় হইয়াছে, আর সেই ধুম-মোহে আমার জ্ঞান আচ্ছন্ন করিয়া বাথিয়াছে।’ এই বলিয়া বিলাপ করিতে করিতে তিনি উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন,—“হ প্রিয়ে জানকি !” নেপথ্যে উত্থিত সেই স্বর তমসার ও সীতাদেবীর কণে প্রবেশ করিল। স্ত্রীরামচন্দ্র যখন নেপথ্যে কহিলেন,— “অস্তলীনস্ত দুঃখায়েরস্তোদামং জ্বলিষ্যতঃ । উৎপীড় ইব ধূমস্ত মোচ প্রাগাবৃণোতি মাম।” তখন সীতাদেবী ও র্তাহার সর্থীদ্বয়ের হৃদয় মন তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইল। বরপ্রভাবে সীতাদেবী স্ত্রীরামচন্দ্রের আদর্শনীয় ছিলেন। র্তাহার সখী তমসা ও অদৃশুভাবে অবস্থিত থাকেন। ক্ষণপরে বাসন্তী স্ত্রীরামচন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হন । এই সময় সীতাদেবীর শোকে অভিভূত হইয়া, এঁরামচন্দ্ৰ মুছা-ভাবাপন্ন হইয় পড়েন --সাশ্রনয়নে ভূপতিত হইয়া সীতাদেবীর বিষয় চিন্তা করিতে থাকেন। দেবী তখন আর স্থির থাকিতে পারেন না । তিনি অদৃশুভাবে নিকটে গিয়া করপল্লব দ্বারা তাহার শুশ্রুষায় রত হন। এই সময়ের কল্পনা-কৌশল বড়ই মনোহর ! স্ত্রীরামচন্দ্র সীতাদেবীকে দেখিতে পাইতেছন না, অথচ তাহার অঙ্গস্পর্শজনিত অনুপম আনন্দ অনুভব করিতেছেন । আনন্দে গদগদ হইয়া শ্রীরামচন্দ্র কজিতেছেন,— “প্রশ্চোতনং টু হরিচন্দনপল্লবানাং নিপীড়িতেন্দুকরকন্দলজোমু সেকঃ । আতপ্তজীবতিমনঃপবিতর্পণোমে সঞ্জীবনৌষধিরসে তু হৃদি প্রসিক্তঃ ॥ স্পর্শ; পুরা পরিচিতোনিয়তং স এষ সঞ্জীবনশ্চ মনসঃ পরিমোহনশ্চ । সন্তাপজাং সপদি য: প্রতিহত্য মূছামানন্দেন জড়তাং পুনরাতনোতি।” "এ কি হরিচন্দন-পল্লবের অমৃতক্ষরণ ! অথবা, এ কি সুধাংশুকিরণ-সমুদ্ভূত নিৰ্য্যাসের ধারা ! অথবা, এ কি সস্তাপদগ্ধ জীবনের শাস্তিদায়িনী সঞ্জীবনী সুধা আমার হৃদয়ে প্রলিপ্ত হইল ! প্রাণানন্দারিনী সীবনী-শক্তিশালিনী এ স্পশামস্থতি যেন পূৰ্ব্বপরিচিত। জানকীকে পরিত্যাগ-জনিত অবসাদ দূর হইয়া এ স্পর্শে আনন্দজনিত কি যেন এক অভিনব অবসাদ আনয়ন করিতেছে। এই স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে জানকীর স্মৃতি মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে অনুভূত হইতে লাগিল । এই সময়ে বাসস্ত্রী জীীরামচন্ধের সমক্ষে উপস্থিত হইলেন। জানকীর বির অধিকতর-রূপে র্তাহার হৃদয়ে অঙ্কিত করিবার জন্য, বাসন্তী একে একে পারিপার্শ্বিক দৃপ্তাবলী তাহাকে দেখাইতে আরম্ভ করিলেন ; কহিলেন—“এই দেখুন, সেই কদলীকুঞ্জ ! এইখানেই এই মৰ্ম্মরোপরি সীতাসহ আপনি কত মুখে কালযাপন করিয়াছিলেন ! এই মৰ্ম্মর-বেদীতে বসিয়াই দেবী মৃগশাবককে আহার দিতেন, আর তাহারা নি:শঙ্কে আসিয়া তাহাকে ঘেরিয়া দাড়াইত। মনে পড়ে কিলে স্থতি" স্ত্রীরামচন্দ্র আর সহ করিতে পারিলেন না। অশ্রুঙ্গলে তাহার বক্ষঃস্থল প্লাবিত হইল।