পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । 8○な ভট্টের পরিভাষাসংগ্রহ, রামচজ আচাৰ্য্যের প্রক্রিয়াকৌমুদী প্রভৃতি প্রসিদ্ধ। পাণিনীয় দর্শন নামে এক দর্শন-গ্রন্থের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। সেই গ্রন্থে সমস্ত শব্দের উৎপত্তি-তত্ত্ব নির্দিষ্ট হইয়াছে। ‘সর্বদর্শন-সংগ্রহকার এই দর্শনের পরিচয় প্রসঙ্গে বলিয়াছেন,—‘শব্দই ব্ৰহ্ম ; সুতরাং শঙ্কশাস্ত্র আলোচনা করিতে করিতেই মুক্তিলাভ হয়। পাণিনীয় দর্শনের ইহাই প্রতিপাদ্য।’ পাণিনির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ী, উপবর্ষ, ভাগুড়ী, মাহেশ প্রভৃতি বহু প্রাচীন বৈয়াকরণের নামোল্লেখ হইয়া থাকে। উদ্ভট শ্লোকে প্রকাশ,—মাহেশের ব্যাকরণ-প্রকরণের তুলনায় পাণিনির ব্যাকরণ যেন সমুদ্রের নিকট গোস্পদতুল্য। বাড়ীর ব্যাকরণে লক্ষাধিক শ্লোকে ব্যাকরণের স্বত্ৰাদি লিপিবদ্ধ ছিল। সে ব্যাকরণও অতি প্রসিদ্ধ। ভাগুড়ী নামক অার এক বৈয়াকরণ ঐ সময়ে যশস্বী হইয়াছিলেন। বলা বাহুল্য, তাহাদের সকলেরই স্মৃতি লোপ পাইয়াছে। একমাত্র পাণিনিই এখন প্রাচীন বৈয়াকরণগণের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠা রক্ষা করিতেছেন। অধুনা-প্রচলিত আর আর প্রাচীন ব্যাকরণের মধ্যে কলাপ ও মুগ্ধবোধ ব্যাকরণের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বঙ্গদেশে, বিশেষতঃ পুৰ্ব্ববঙ্গে, কলাপ-ব্যাকরণের বিশেষ প্রচলন আছে । পাণিনির ব্যাকরণের পরেই কলাপের আসন নির্দিষ্ট হয়। এই ব্যাকরণের উৎপত্তি সম্বন্ধেও বিবিধ উপাথ্যান প্রচলিত আছে। এক মতে, সৰ্ব্ববৰ্ম্ম নামক জনৈক পণ্ডিত এই ব্যাকরণের প্রবর্তল্পিত ; অন্ত মতে, কুমার কাৰ্ত্তিকেয় হইতে কলাপ-ব্যাকরণের স্বত্র-সমূহ তিনি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কুমার হইতে প্রাপ্ত বলিয়া এই ব্যাকরণ ‘কুমার-ব্যাকরণ’ নামেও অভিহিত হয় । কলাপ-ব্যাকরণের অপর নাম-কাতন্ত্র। ঈষৎ তন্ত্র অর্থাৎ অল্প-স্বত্র দ্বারা লিখিত বলয়াই ইহার নাম কাতন্ত্র (ঈষত্তন্ত্রং কাতন্ত্ৰম্। ঈৰচ্ছন্ধোইরার্থকক)। কলাপ ব্যাকরণের স্বষ্টি সম্বন্ধে নিম্নলিখিত উপাখ্যানটা সৰ্ব্বপ্রসিদ্ধ। “রাজা শালিবাহন কোনও মহিষীর সঙ্গে জলক্রীড়া করিতেছিলেন । জলসিঞ্চনে সেই রাণী রতিরসে আত্মহারা হইয়া রাজাকে বলিলেন,—“মোদকং দেহি দেবঃ ” অর্থাৎ,— —হে দেব! আমাকে উদক (জল) দিও না। মুর্খতাবশতঃ রাজা সেই স্বরঘটিত পদ বুঝিতে ন পারিয়া রাণীকে একটা মোদক (মোয়া ) প্রদান করিলেন। তাহাতে সেই বুদ্ধিমতী রাণী আমার পতি রাজা হইলেও মুর্থ —এই বলিয়া নিন্দ করিলেন। শালিবাহন, ভাৰ্য্যার সমুদায় কথা গুরু সৰ্ব্ববৰ্ম্মার নিকট জ্ঞাপন করিলেন। তখন সৰ্ব্ববৰ্ম্ম তাহার শিক্ষার জন্ত কাতন্ত্র রচনা করিলেন।” এই ব্যাকরণ রচনায় সৰ্ব্ববৰ্ম্মাকে কুমার কাৰ্ত্তিকেয়ের আরাধনা করিতে হইয়াছিল। কাৰ্ত্তিকেয়ের ময়ুর দৃষ্টে “সিদ্ধোবর্ণসমামায়োঃ” এই স্বত্রট তাহার মুখ হইতে বিনির্গত হয়। কলাপব্যাকরণের বহু বৃত্তি ও টীকা আছে। তন্মধ্যে দুর্গসিংহ কৃত বৃত্তি প্রসিদ্ধ। সেই বৃত্তি না থাকিলে বোধ হয় কলাপ ব্যাকরণ লোপ প্রাপ্ত হইত। এতদেশপ্রচলিত কলাপ ব্যাকরণের টীকা ও ব্যাখ্যার মধ্যে রঘুনাথ শিরোমণির ব্যাখ্যা এবং ঐপতি, ত্ৰিলোচন ও কবিরাজ প্রভৃতির কৃত টীকা সাধারণতঃ সমাদৃত। কলাপ ব্যাকরণের পরই মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ প্রসিদ্ধিসম্পন্ন। অধুনা বঙ্গদেশে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণের বিশেষ প্রচলন। মুখবোধ ব্যাকরণের রচয়িতার নাম—বোপদেব। খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে তাহার জন্ম হইয়াছিল বলির অনেকে নির্দেশ করেন। পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্বে যে সকল ব্যাকরণ প্রচলিত ছিল,