পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৯১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৪ ভারতবর্ষ । কোন উক্তির উপর আস্থা প্রদর্শন করিব ? এক হিসাবে উভয় উক্তিরই সার্থকতা আছে ; এক হিসাবে উভয়বিধ উক্তিই ভিত্তিহীন । সার্থকতা আছে—মমু ও জলপ্লাবন প্রসঙ্গের সঙ্গতিরক্ষায় । পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবনে যখন সমগ্র ভূখণ্ড জলমগ্ন হইয়াছিল এবং মন্থর বহির হিমাচল-শীর্ষে স্থান লাভ করিয়াছিল ;–তখনকার কথা স্মরণ করিলে, তখনকার চিত্র প্রকটিত করিতে গেলে, হিমাচলের এক-তৃতীয়াংশ জললগ্ন হওয়ার সংবাদেও বৈচিত্র্য নাই, আবার রাজমহলের নিয়ে বঙ্গোপসাগর কিছুদিন অবস্থিত থাকাও অসম্ভব নয়। কিন্তু সে কত কালের কথা ! যদি বর্তমান বৈবস্বত মম্বন্তরের প্রারম্ভেও সেই জলপ্লাবন সংঘটিত হইয়াছিল বলিয়া মনে করি, তাহাহইলেও বৰ্ত্তমান সময়ের অন্ততঃ ৩৮ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৪ বৎসর পূৰ্ব্বে সে বিপ্লব উপস্থিত হয়। কিন্তু মানুষের ধ্যান-ধারণার শক্তি কমিয়া জাসায়, ঐ দুর অতীতকালের ঘটনাকে মানুষ কল্যকার ঘটনা বলিয়া প্রচার করিতে প্রবুদ্ধ হইতেছে। তার পর, যদি ইওসিন’-যুগে হিমালয়-পাদমূলে সমুদ্র-জল বিস্তৃত ছিল মনে করি, সেই কি অল্পদিনের কথা ! ভূতত্ত্ববিদগণ পৃথিবী-স্বষ্টির মনুষ্য-স্থষ্টির কি স্তরপৰ্য্যায় নিৰ্দ্ধারণ করিয়া গিয়াছেন, অনুধাবন করিয়া দেখুন। * লক্ষ লক্ষ বৎসরে এক একটা স্তর সঞ্চিত হয় । ভূতত্ত্ববিদগণের মতে—স্বষ্টির আদিকাল হইতে এ পর্য্যন্ত পাচটা প্রধান স্তুর এবং সেই পাচ স্তরের পঞ্চদশাধিক উপস্তর নির্দিষ্ট হইয়া থাকে। এক্ষণে পঞ্চম স্তরের অন্তর্গত দ্বিতীয় উপস্তরের কার্য্য চলিতেছে । সেই উপস্তর রিসেণ্ট’ বা ‘পোষ্টগ্লেসিয়াল’ নামে অভিহিত । এই উপস্তরের অব্যবহিত পূর্বের উপস্তরের নাম—‘প্লেষ্টোসিন’ বা ‘গ্নেসিয়াল’ উপস্তর। গ্লেসিয়াল’ উপস্তরে পৃথিবী তুষারাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল। পোষ্টমেসিয়াল’—তুষারাচ্ছন্ন অবস্থার পরবৰ্ত্তিকাল। এই দুই উপস্তর সঞ্চিত হইতে তিন লক্ষ বিশ হাজার বৎসর অতীত হইয়া গিয়াছে। ইওসিন’ উপস্তর—এই দুই (গ্লেসিয়াল ও পোষ্টমেসিয়াল) উপস্তরের পূর্ববর্তী আরও তিনট উপস্তরের পূর্বের কাল। উহা স্বষ্টির চতুর্থ স্তরের প্রথম উপস্তর। দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার বৎসর পোষ্ট্র-মেসিয়াল উপস্তরের সঞ্চারের ও পূর্ণতপ্রাপ্তির কাল নির্দিষ্ট হয়। এই হিসাবে, প্লিওসিন,’ ‘মিওসিন, ‘অলিগোসিন’—এই তিন উপস্তরের পূর্ববর্তী ইওপিন উপস্তর কত পূর্বের স্তর, অনুধাবন করিয়া দেখুন দেখি ! এ হিসাবে, বর্তমান সময়ের অন্ততঃ দশ লক্ষ চল্লিশ হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে ইওসিন স্তর পূর্ণতাপ্রাপ্ত হইয়াছিল, বুঝিতে পারা যায়। পাশ্চাত্য-মতে এ অবস্থা মনুষ্য-স্থষ্টির পূর্বের অবস্থা। সুতরাং পাশ্চাত্যমতে মনুষ্ঠ-স্বষ্টি যখন আরস্ত হইয়াছিল, এদেশেই প্রথম অৗরস্ত হয় বুঝিতে পারি। আবার যে ভূতত্ত্ববিদগণ বঙ্গদেশ সেদিন মাত্র সমুদ্রগর্ভ হইতে উত্থিত হইয়াছে বলিয়া ঘোষণা করেন, র্তাহাদেরই এক সম্প্রদায়ের যুক্তিতে অতি প্রাচীনকালে বঙ্গদেশের বিদ্যমানতার বিষয় প্রতিপন্ন হয় । অধিকন্তু, তাহা হইতে বুঝিতে পারি, সমৃদ্ধি-সম্পন্ন বঙ্গদেশের অংশ-বিশেষ প্রাকৃতিক বিপ্লবে একসময়ে ভূগর্ভে প্রোথিত হইয়াছিল। কলিকাতার ও তন্নিকটবৰ্ত্তী স্থানের ভূ-স্তর পরীক্ষা করিয়া ভূতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতগণ যে সিদ্ধান্তে "ম্বিনীর इंडिशन" তৃতীয় খণ্ডে স্থষ্টিতত্ত্ব-প্রসঙ্গে ইওসিন’, ‘মিওসিম’ প্রভৃতির স্তর-পর্যায়ের বিষ্কৃত বিবরণ প্রদত্ত হুইয়াস্থে ।