পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છેર ভারতবর্ষ । ইহলীলা সম্বরণ করেন । চেং-কন এবং তঁাহার সঙ্গিগণ অনেকেই শ্ৰীভোজ অথবা চম্পা উপনিবেশে মৃত্যুমুখে পতিত হন। সুতরাং তাহাদের অদৃষ্টে ভারতবর্ষে আসা ঘটে নাই । চাং-মিন পথে সমুদ্রগর্ভে পোতমগ্নে প্রাণ হারাইয়াছিলেন। ঐ মহামনা পরিত্রাজক একখানি বাণিজ্যপোতে আরোহণ করিয়৷ সুমাত্রা-দ্বীপস্থিত মালয়-বন্দর হইতে ভারতবর্ষাভিমুখে অগ্রসর হইতেছিলেন। যে বাণিজ্য-পোতে তিনি আশ্রয় গ্রহণ করেন, গুরুভারে সেই পোত জলমগ্ন হয় । বন্দর পরিত্যাগ করিয়া অৰ্দ্ধ দিবস মাত্র অর্ণবপোত সমুদ্রপথে চলিয়াছে, সহসা উত্তাল তরঙ্গ আসিয়া পোতখানিকে বিপর্য্যস্ত করিল। ঐ অর্ণবপোতে আরোহিগণের জীবন-রক্ষার উপযোগী কয়েকখানি ক্ষুদ্র তরণী ছিল। আসন্ন-বিপদে আরোহিগণ সকলেই সেই সকল তরণীতে আশ্রয় লইবার জন্য ব্যস্ত হইলেন । সেই অর্ণবপোতের পরিচালক বৌদ্ধ-ধর্মের অনুরাগী ছিলেন। পরিব্রাজক চাং-মিনকে বঁাচাইবার জন্য তিনি বিশেষরূপ চেষ্টিত হইলেন। কিন্তু চাং-মিন দেখিলেন,—তাহার জীবন রক্ষা করিতে গেলে, আর এক জনের জীবন নষ্ট হয় । সুতরাং তিনি পোতাধ্যক্ষকে কহিলেন,—“আমায় বঁাচাইবার প্রয়োজন নাই। আপনি অপরাপর সকলের প্রাণরক্ষা করুন। আমি যে অবস্থায় আছি, সেই অবস্থায়ই রহিলাম, একটুও নড়িব না।” দেখিতে দেখিতে পোত জলমগ্ন হইল। বৌদ্ধ-শ্রমণ চাং-মিন সমুদ্রের অনন্ত-ক্রোড়ে আশ্রয় লইলেন । ইৎ-সিঙের ভারতগমনের পরবর্তিকালে তিন শতাব্দী কাল,খুষ্টীয অষ্টম শতাব্দী হইতে একাদশ শতাব্দী পর্য্যন্ত, চীন-দেশের সম্রাট চীন-দেশের বহু বৌদ্ধ-শ্রমণকে ভারতবর্ষে আসিবার অনুমতি দিয়াছিলেন। চীন-দেশের রাজকীয় বিবরণীতে র্তাহীদের বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। সেই সকল পরিব্রাজক প্রধানতঃ বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম-সংক্রান্ত গ্রন্থাদি সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এদেশে আগমন করিয়াছিলেন। ৯৬৬ খৃষ্টাব্দে "তাও-ইউ-এন ভারতবর্ষ হইতে প্রত্যাবৃত্ত হন । ভারতবর্ষে তিনি দ্বাদশ বৎসর বাস করিয়াছিলেন। তিনি চীন-দেশে প্রত্যাবৃত্ত হইলে, চীন-সম্রাটের আদেশ লইয়া ১৫৭ জন ধৰ্ম্মযাজক চীন হইতে ভারতবর্ষে আগমন করেন । ক্ষিণি নামক আর একজন পরিব্রাজক চীন-দেশীয় তিন শত বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ ৯৬৪ খৃষ্টাব্দ হইতে ৯৭৬ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত ভারতবর্ষে অবস্থান করিয়ছিলেন । সংস্কৃত-গ্রন্থ-সংগ্রহ এবং বৌদ্ধ-ধৰ্ম্ম-সংক্রাস্ত স্মৃতিচিহ্ন-সমূহ সংগ্রহ তাহাদের উদ্দেশু ছিল । একাদশ শতাব্দীর পর ভারতে বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মের প্রভাব লোপ পাইতে আরম্ভ হইলে চীন-দেশীয় ধৰ্ম্ম-যাজকগণের ভারতবর্ষে আগমনের পথ প্রায় অবরুদ্ধ হয় । বহুদিন পর্য্যন্ত তৎসংক্রান্ত বিশেষ কোনও পরিচয় পাওয়া যায় নাই । পরিশেষে খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্য-ভাগে ( ১৩৪২ খৃষ্টাব্দে ) আর একবার মাত্র চীনের সহিত ভারতের ধৰ্ম্ম-সম্বন্ধের পরিচয় পাওয়া যায়। তখন পাঠান-বংশীয় সম্রাট মহম্মদ তোগলক দিল্লীর সিংহাসনে সমাসীন ছিলেন। সেই সময় চীন-সম্রাটের জনৈক প্রতিনিধি সম্রাট-সকাশে উপস্থিত হন, এবং হিমালয়-পাদমূলে কোরা-পৰ্ব্বতের উপরিস্থিত বৌদ্ধ-মন্দির পুনৰ্নিৰ্ম্মাণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। ঐ স্থানে অনেক দিন পর্য্যন্ত চীনাদিগের গতিবিধি ছিল। এই সকল ঘটনায়, পরিব্রাজকগণের বর্ণনায়, প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যগৌরকে যে পরিচয় পাওয়া যায়, ইতিহাসের অঙ্ক হইতে কখনও ভাব লোপ পাইবার