পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - প্রথম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

J ভারতবর্ষ । করিয়া গিয়াছেন। .সার উইলিয়ম জোনস, অধ্যাপক এইচ এইচ উইলসন, মিঃ কোলব্রুক, মিঃ পোকক, সার উইলিয়ম হামিণ্টন, মিসেস ম্যানিং প্রভৃতি পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের সকলেরই প্রায় এ সম্বন্ধে এক মত । ভারতবর্ষের সভ্যতা কত কাল অব্যাহত, তাহার ইয়ত্ত হয় না । ভারতীয় সভ্যতার দীর্ঘ-জীবনের বিষয় চিন্তু করিলেও বিঘ্নিত হইতে হয় । উন্নতির উচ্চ-চুড়ায় আরোহণ করিয়া, ভারতবর্ষ কত জাতির কতরূপ উত্থান-পতন দর্শন করিল ;– তাহার চক্ষের সমক্ষে কত নুতন জাতির নুতন সাম্রাজ্যের অভু্যদয় ও অবসান হইল ;–জলবুদবুদের ন্যায় কত জাতি কত সাম্রাজ্য উদ্ভূত হইয়াই আবার কালসাগরে বিলীন হইল ; কিন্তু ভারতবর্ষের আর্য্য-হিন্দুজাতির কখনই ক্রমভঙ্গ হয় নাই ;–ৰ্তাহাদের ধৰ্ম্ম, সমাজ ও সভ্যতার মৌলিকত্ব চিরদিন অটুট রহিয়াছে। সেই প্রণব-ধ্বনি-আজিও আৰ্য্য-হিন্দুর প্রাণে প্রাণে প্রতিধ্বনিত ! সেই ব্রহ্মণ্য-গৰ্ব্ব-—আজিও এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্র পরিদৃষ্ট ! সেই সমাজ, সেই ধৰ্ম্ম, সেই আচারব্যবহার, সেই রীতি-নীতি-পদ্ধতি—আজিও অবিচ্ছিন্নভাবে বিরাজমান ! সেই শাস্ত্র, সেই বেদবেদাঙ্গ, সেই মন্বত্রিযাজ্ঞবল্কা, সেই পিতৃ-পরিচয়— সেই সবই রহিয়াছে ! এমন ক্রমপর্য্যায় বুঝি পৃথিবীর আর কোথাও নাই—কোন জাতিরই নাই ! দৃষ্টান্ত কি আর দিব ? প্রাচীন মিশর, মানিলাম, খৃষ্ট-জন্মের কয়েক সহস্ৰ বৎসর পুৰ্ব্বে সভ্য-সমুন্নত বলিয়। প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিল ! কিন্তু অনন্ত কাল-সাগরে সে কয় দিন মাত্র ! এখন,কোথায় সেই জাতি ? —কোথায় তাহীদের সেই প্রাচীন ধৰ্ম্ম ?—কোথায় তাহীদের সেই প্রাচীন ভাষা-সাহিত্য ? কয়েকটা মাত্র পৗরামিড প্রস্তরলিপি প্রভৃতি দেখিয়া এখন তাহাদের অস্তিত্ব নির্ণয় করিতে হইতেছে! প্রাচীন রোম, খৃষ্টজন্মের সাড়ে সাত শত বৎসর পূৰ্ব্বে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু তাহারই বা এখন কি ক্রমপর্য্যায় বিদ্যমান আছে ? খৃষ্টজন্মের পীচ শত বৎসর পূৰ্ব্বে পুরাবৃত্তে গ্রীস-দেশ উচ্চ-আসন লাভ করে । কিন্তু সেই গ্রীসেরই বা এখন সে পরিচয়-সম্বন্ধ কি আছে ? ফিনিসীয়, কার্থেজীয়, বাইজেণ্টাইন এবং যুর প্রভৃতি প্রাচীন জাতি ভূমধ্য-সাগরের উপকূল-ভাগে কয় দিন পূৰ্ব্বে কি প্রভাবই বিস্তার করিয়া ছিল ! কিন্তু তাহাদেরই বা কি পরিচয়-চিহ্ন এখন খুজিয়া পাই ? এই রূপ পৃথিবীর যে জাতির ইতিবৃত্তই অনুসন্ধান করি না কেন, দেখিতে পাই, সকল জাতিরই ক্রম-পৰ্য্যায় ভঙ্গ হইয়াছে ;—কেবল ভারতীয় আর্য্য-হিন্দুগণ আজি পৰ্য্যস্ত আপনাদের পিতৃপুরুষের পরিচয়-চিহ্ন অব্যাহত রাখিয়া আসিয়াছেন । বিপ্লবের কত প্রবল প্রবাহ ভারতবর্ষের বক্ষের উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে ; কত বৈদেশিক জাতির কত ভীষণ আক্রমণে ভারতবর্ষ কত সময় বিপৰ্য্যস্ত হইয়াছে,—তাহার পবিত্র দেবমন্দির কলুষিত, দেবদেবী চুর্ণীকৃত,শাস্ত্রগ্রন্থ ভস্মীভূত,-কত অত্যাচারই তাহার উপর দিয়া চলিয়া গিয়াছে ; কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তথাপি হিন্দুজাতির ক্রমভঙ্গ হয় নাই। স্বষ্টির আদিকালে যে ব্রাহ্মণ যে প্রণবধ্বনি উচ্চারণ করিয়া আত্ম-পরিচয় দিয়া আসিয়াছেন, আজিও সেই ব্ৰাহ্মণ সেই প্ৰণব-মন্ত্র উচ্চারণ কপ্লিয়াই আত্ম-পরিচয় প্রদান করিতে সমর্থ রহিয়াছেন । ভtল্পত্তীয় সভ্যতার অবিচ্ছিন্নত ।