পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - সপ্তম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেগাস্থিনীপ। 4}} দুতগণের বর্ণনা ঐতিহাসিকগণ একদিকে যেমন অবিশ্বাসযোগ্য বলিয়া তৎপ্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়াছেন, একদিকে যেমন তাহারা তাহাদিগকে অসত্যবাদী কল্পনার প্রশ্রয়দাতা বলিয় তাহদের প্রতি ঘূণাকটাক্ষপাত করিয়াছেন ; অন্যদিকে আবার তাহারাই সেই সকল অবিশ্বাসযোগ্য দুতগণের বর্ণনা আপন আপন গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট করিয়া কৃতার্থমন্ত হইয়াছেন। দুষ্টান্তস্বরূপ ষ্ট্রাবের গ্রন্থোক্ত তারতবর্ষের বিস্তৃতির বিষয় উল্লেখ করা যাইতে পারে। মেগাস্থিনীসের ‘ষ্টাথমি’ গ্রন্থের অনুসরণে তিনি ভারতবর্ষের ঐরুপ বিস্তৃতিপরিমাণ নিৰ্দ্ধারণ করিয়া গিয়াছেন । সুতরাং যে মেগাস্থিনীসের প্রতি ঐতিহাসিকগণের এত অবিশ্বাস এত উপেক্ষার ভাব, সেই মেগাস্থিনীসের ‘ইণ্ডিকা গ্রন্থের অনুসরণ র্তাহারা এত বহুল পরিমাণে কেন করিলেন,--ইহাই আশ্চর্য্যের বিষয় ! কিন্তু প্রকৃত তথ্য কি ? মেগাস্থিনীস স্বচক্ষে যাহা পরিদর্শন করিয়াছেন, তাহার অমূলক কাল্পনিক চিত্রে আপনার গ্রন্থ-কলেবর পরিপুষ্ট করিবেন, ইহার তাৎপৰ্য্য কি ? ঐতিহাসিকএন. গণের আরোপিত মেগাস্থিনীসের কলঙ্ক-খালন বাপদেশে ডক্টর সোয়ানবেক সোয়ালবেকের কয়েকট যুক্তির অবতারণা করিয়াছেন । তদনুসারে বুঝা যায়,-প্রথমতঃ অভিমত । মেগাস্থিনীসের গ্রন্থে ভারতীয় কাল্পনিক জাতির চিত্রদর্শনে এবং দ্বিতীয়তঃ হেরাক্লেস ও তারষ্টীয় ডায়নিসিয়াসের বর্ণনাপাঠে, ঐতিহাসিকগণ মেগাস্থিনীস প্রভূতিকে অবজ্ঞার চক্ষে দর্শন করিয়াছেন। ঐতিহাসিকগণের সে সিদ্ধান্তের অলৌক্তিক প্রদর্শনে "ষ্ট্রর সোয়নলেক যে মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন, নিয়ে তাহার মৰ্ম্ম প্রকটিত হইল ; যথা,— অতি প্রাচীনকাল হইতে ভারতীয় অর্ধ্যেহিন্দুগণ তদেশজাত অসভা অনার্যগণ কর্তৃক পরিবেষ্টিত হষ্টয়া বসবাস করিতেছিলেন । উভয় সম্প্রদায় বিভিন্ন প্রকৃতিসম্পন্ন ছিলেন ; ষ্ঠাহীদের ভাষা, ভাল, দেহ ও মন বিভিন্ন উপাদানে সংগঠিত হইয়াছিল। উভয় সম্প্রদায়ই এ পার্থক্য সম্যকৃরূপে উপলদ্ধি করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন । অনাৰ্য্যগণ, আর্য্যগণের রাষ্ট্রজন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হইতেন না ; পরস্তু আৰ্য্যগণ র্তাহাদিগকে ঘৃণার চক্ষে দেখিতেন। অনেক সময় মানসিক পার্থক্যের বিষয় হৃদয়ঙ্গম করা মুকঠিন হয় ; কিন্তু দৈহিক তারতম্য সহজেই অনুভূত হইয় থাকে। আর্য্যগণ অনার্য্যগণের এবং অনার্যগণ আর্ষ্যগণের আকৃতিপ্রকৃতির লিনয় এতই অতিরঞ্জিত ও কাল্পনিকভাবে ব্যক্ত করিতেন যে, কালক্রমে তাহা অলৌকিক উপাখ্যান-সমূহের স্থান অধিকার করিয়া বলে। জনশ্রুতি-মূলে যখন সেই সকল অমামুষিক চিত্র প্রচার হইতে লাগিল, কল্পনা-কুশল কবিগণ সে সুবিধা পরিত্যাগ করিলেন না । আপন অfপন কল্পনার সাহায্যে সেই সকল অমান্তর্ষিক কাহিনী ওঁহারা অধিকতর ভয়াবহ করিয়া তুলিলেন । এতদ্ব্যতীত, ভারতীয় অপরাপর জাতি, র্যাহারা সমাতন-ধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত আচার-ব্যবহার এবং জাতি-বিভাগ মান্ত করিতেন না—তাহারা সকলেই, অসত্য বৰ্ব্বর পর্য্যায়ভুক্ত হইয়াছিলেন। সেই স্বত্রে তাহদের সম্বন্ধেও বহু অমামুষিক ও অলৌকিক উপাখ্যান সমূহ প্রচারিত হইয়াছিল। তাই পুরাণাদি গ্রন্থে ব্রাহ্মণনিষেবিত ভারতের চতুঃপাশ্বে নানা জাতীয় অসত্য বৰ্ব্বর ও অসুর-প্রকৃতি-সম্পন্ন জাতির অবস্থিতির পরিচয় প্রাপ্ত হই। কিন্তু তৎসমুদায় এতই কল্পনা-বহল যে, সে সকল উপাখ্যানের মূল নির্ণয় করা সৰ্ব্বত্র সহজসাদা