প্রকৃতির ভারসাম্য
আরেকটা ছদ্মবিজ্ঞান আছে যা প্রকৃতির ভারসাম্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকৃতি সবসময়ই প্রবাহমান। বিবর্তনগত বা বাস্তুতান্ত্রিক— কোনো সময় পর্যায়েই প্রকৃতিতে ভারসাম্য ছিল না। চার লক্ষ কোটি বছর আগে জীবনের জন্ম হয়েছিল। সেইসময় থেকেই যদি সবটা ভারসাম্যে থাকত তবে এখন শুধুই বায়বীয়, সালোকসংশ্লেষে অক্ষম আদীম জীব বেঁচে থাকত গভীর সমুদ্রে, সমুদ্রের ভেতর যেখানে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে চলে। কিন্তু জীবন কখনো ভারসাম্যে থাকেনি। দুই লক্ষ কোটি বছর আগে এরা সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছিল স্থলভাগের স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়। এরপর ক্রমশ এরা বসতি তৈরি করে ফেলে বাকি ভূখণ্ড, এমনকি বায়ুতেও। প্রাণ বিবর্তিত হয়েছে সরল এককোষী জীব থেকে জটিল ছত্রাক, গাছপালা এবং প্রাণীতে। আমাদের প্রজাতিটিই ৩ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল এবং ভারতে তারা বসতি গড়ে তোলে ৬৫ হাজার বছর আগে। প্রসঙ্গত সেইসময়ে এই মহাদেশে এশীয় হাতি আদৌ ছিল না; এই প্রজাতিটা অনেককাল পরে এসেছে। অর্থাৎ বেদখল নিয়ে কথা বলতে হলে বলতে হবে যে হাতি মানুষের বাসস্থান বেদখল করেছে। বাস্তুতান্ত্রিক সময়ের মানদণ্ডেও নিরন্তর গতিশীল পরিবর্তনের কথা দেখা যাচ্ছে। Indian Institute of Science-এর Centre for Ecological Sciences-এ ১৯৮৮-৮৯ সাল নাগাদ আমরা ৫০ হেক্টর জায়গার ওপর পর্ণমোচী বৃক্ষের একটি স্থায়ী ক্ষেত্র তৈরি করেছিলাম তামিলনাড়ুর মুদুমালাই-এর অরণ্যে। এই ক্ষেত্রটিতে ৭১-টি প্রজাতির মোট ২৫,৯২৯-টি বৃক্ষ, যাদের DBH (diameter at breast height) ছিল ১ সেণ্টিমিটারের ওপর, তাদেরকে চিহ্নিত ক’রে, পরিমাপ ক’রে, মানচিত্র তৈরি ক’রে, তাদের ভাগ্য পরীক্ষা করা হয় এখনো পর্যন্ত; আমার সহকর্মী সুকুমার তা করেন। নিরক্ষীয় অঞ্চলের উদ্ভিদসমূহের গতিবিধি সংক্রান্ত দীর্ঘকালীন গবেষণার জন্য তৈরি হওয়া আন্তর্জাতিক বড় বড় প্লটের মধ্যে এটি একটি। ফলাফলে দেখা যায় যে এই সমস্ত প্লটগুলিতেই উদ্ভিদসমূহের মধ্যে নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে চলেছে।১৪
প্রাণীদের সংখ্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
প্রাণীদের সংখ্যার ছদ্মবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল প্রকৃতিতে ভারসাম্য রয়েছে, তাই অরণ্য বাস্তুতন্ত্রের মধ্যেই প্রজাতিগুলির সংখ্যাগুলি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। যাবতীয় সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে সাম্প্রতিককালে মানুষ জঙ্গল বাস্তুতন্ত্রে থাবা বসানোর কারণে। এইগুলি ভয়ানক ত্রুটিযুক্ত বক্তব্য, কারণ প্রাণীরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন কোথাও থাকে না। এই পরিস্থিতির সত্যতা যাচাই করতে প্রয়োজনীয় হল আগ্রহের প্রাণীর প্রজাতিটির সংখ্যা তার সমগ্র ব্যপ্তিতে জানা। আমি এ বিষয়ে ১৯৬৯ থেকে কাজ করছি;১৫ এই সংখ্যার একটা বড় অংশ জঙ্গল-বসতির বাইরে থাকতে পারে, যা অবশ্যই অভয়ারণ্য এবং ন্যাশনল পার্কগুলোর বাইরে। এই ঘটনা ঘটেছে হাতি ও বনশুয়োরের ক্ষেত্রে। বনদপ্তরের সংখ্যাতত্ত্ব সর্বদাই অবিশ্বাস্য, যেমন সারিস্কাতে দেখানো হয়েছিল। এমনকি এইচ এস পাবলা-র মত একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি মধ্যপ্রদেশের মুখ্য বন্যপ্রাণ তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, কেউ হলপ করে বলতে পারবে না, কিন্তু গির ন্যাশনল পার্কের বাইরেই অন্তত ৬০% সিংহ রয়েছে।
কীভাবে সমগ্র ব্যাপ্তিতে প্রাণীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয়? শিকার, রোগভোগ, খাদ্য, বাসা বাঁধার গর্তের অভাব এবং বন্যা, ধস ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হলে,
22