পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
১১

 শৈল। রসিকদাদা, তোমারই বা তাতে কি লাভ?

 রসিক। ভাই, সইতে পারলুম না কি করি। বছরে বছরেই তোর বোনদের বয়স বাড়চে, বড় মা আমারই দোষ দেন কেন? বলেন, দুবেলা বসে বসে কেবল খাচ্চ, মেয়েদের জন্যে দুটো বর দেখে দিতে পার না! আচ্ছা ভাই আমি না খেতে রাজি আছি, তা হলেই বর জুটবে,—না, তোর বোন্দের বয়স কম্তে থাকৃবে? এদিকে যে দুটির বর জুট্চে না, তাঁরাত দিব্যি খাচ্চেন দাচ্চেন! শৈল ভাই, কুমারসম্ভবে পড়েছিস্, মনে আছে ত?—

স্বয়ং বিশীর্ণ দ্রুমপর্ণ বৃত্তিতা
পরাহি কাষ্ঠা তপসস্তয়া পুনঃ
তদপ্যপাকীর্ণ মতঃ প্রিয়ংবদাং
বদন্ত্যপর্ণেতি চ তাং পুরাবিদঃ—

 তা ভাই দুর্গা নিজের বর খুঁজতে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে তপস্যা করেছিলেন—কিন্তু নাৎনীদের বর জুট্চে না বলে আনি বুড়া মানুষ খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেব, বড়মার একি বিচার! আহা শৈল, ওটা মনে আছে ত? তদপ্যপাকীর্ণমতঃ প্রিয়ংবদাং—

 শৈল। মনে আছে দাদা, কিন্তু কালিদাস এখন ভাল লাগ্চে না।

 রসিক। তা হলেত অত্যন্ত দুঃসময় বলতে হবে।

 শৈল। তাই তোমার সঙ্গে পরামর্শ আছে।

 রসিক। তা রাজি আছি ভাই। যে রকম পরামর্শ চাও, তাই দেব। যদি “হাঁ" বলাতে চাও “হাঁ” বল্ব, “না” বলাতে চাও না” বল্ব। আমার ঐ গুণটি আছে। আমি সকলের মতের সঙ্গে মত দিয়ে যাই বলেই সবাই আমাকে প্রায় নিজের মতই বুদ্ধিমান ভাবে।

 অক্ষয়। তুমি অনেক কৌশলে তোমার পসার বঁচিয়ে রেখেচ, তার মধ্যে তোমার এই টাক একটি।