পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
প্রজাপতির নির্বন্ধ

পড়া করে। দেশের কাজ লইয়া নিজের কাজ নষ্ট করা তাহার সংকল্পের মধ্যে ছিল না। চিরকৌমার্য্য তাহার কাছে অত্যন্ত মনোহর বলিয়া বোধ হইত না। সন্ধ্যাবেলায় নিয়মিত আসিয়া সে চন্দ্রবাবুর নিকট হইতে পাস করিবার উপযুক্ত নোট লইত; এবং সে মনে মনে নিশ্চয় জানিত যে, চিরকৌমার্য্য ব্রত না লওয়াতে এবং নিজের ভবিষ্যৎ মাটি করিবার জন্য লেশমাত্র ব্যগ্র না হওয়াতে তাহার প্রতি চন্দ্রমাধব বাবুর শ্রদ্ধামাত্র ছিল না, কিন্তু সেজন্য সে কখনো অসহ্য দুঃখানুভব করে নাই। তাহার পরে কি ঘটিল তাহা সকলেই জানেন।

 সে দিন সভা বসিয়াছে। চন্দ্রমাধব বাবু বলিতেছেন, আমাদের এই সভার সভ্যসংখ্যা অল্প হওয়াতে কারো হতাশ্বাস হবার কোন কারণ নেই—

 তাঁহার কথা শেষ না হইতেই রুগ্নকায় উৎসাহী শ্রীশ বলিয়া উঠিল—হতাশ্বাস! সেইত আমাদের সভার গৌরব! এ সভার মহৎ আদর্শ এবং কঠিনবিধান কি সর্ব্বসাধারণের উপযুক্ত! আমাদের সভা অল্প লোকের সভা।

 চন্দ্রমাধব বাবু কার্য্যবিবরণের খাতাটা চোখের কাছে তুলিয়া ধরিয়া কহিলেন—কিন্তু আমাদের আদর্শ উন্নত এবং বিধান কঠিন বলেই আমাদের বিনয় রক্ষা করা কর্ত্তব্য; সর্ব্বদাই মনে রাখা উচিত আমরা আমাদের সংকল্প সাধনের যোগ্য না হতেও পারি। ভেবে দেখ পূর্ব্বে আমাদের মধ্যে এমন অনেক সভ্য ছিলেন যাঁরা হয়ত আমাদের চেয়ে সর্ব্বাংশে মহত্তর ছিলেন, কিন্তু তাঁরাও নিজের সুখ এবং সংসারের প্রবল আকর্ষণে একে একে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছেন। আমাদের কয় জনের পথেও যে প্রলোভন কোথায় অপেক্ষা করচে তা কেউ বল্‌তে পারে না। সেই জন্য আমরা দম্ভ পরিত্যাগ করব, এবং কোন রকম শপথেও বদ্ধ হতে চাইনে— আমাদের মত এই যে, কোন কালে মহৎ চেষ্টাকে মনে স্থান না দেওয়ার চেয়ে চেষ্টা করে অকৃতকার্য্য হওয়া ভাল।