পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ
৩৫

 পাশের ঘরে ঈষৎ মুক্ত দরজার অন্তরালে একটি শ্রোত্রী এই কথায় যে একটুখানি বিচলিত হইয়া উঠিল, তাহার অঞ্চলবদ্ধ চাবির গোচ্ছায় দুই একটা চাবি যে একটু ঠুন্ শব্দ করিল তাহা পূর্ণ ছাড়া আর কেহ লক্ষ্য করিতে পারিল না।

 চন্দ্রমাধব বাবু বলিতে লাগিলেন, আমাদের সভাকে অনেকেই পরিহাস করেন; অনেকেই বলেন তোমরা দেশের কাজ কর্‌বার জন্য কৌমার্য্য ব্রত গ্রহণ কর্‌চ, কিন্তু সকলেই যদি এই মহৎ প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয় তা হলে পঞ্চাশ বৎসর পরে দেশে এমন মানুষ কে থাক্‌বে যার জন্যে কোন কাজ করা কারো দরকার হবে। আমি প্রায়ই নম্র নিরুত্তরে এই সকল পরিহাস বহন করি; কিন্তু এর কি কোন উত্তর নেই?—বলিয়া তিনি তাঁহার তিনটী মাত্র সভ্যের দিকে চাহিলেন।

 পূর্ণ নেপথ্যবাসিনীকে স্মরণ করিয়া সোৎসাহে কহিল—আছে বৈ কি। সকল দেশেই একদল মানুষ আছে যারা সংসারী হবার জন্যে জন্মগ্রহণ করেনি, তাদের সংখ্যা অল্প। সেই কটিকে আকর্ষণ করে এক উদ্দেশ্যবন্ধনে বাঁধবার জন্যে আমাদের এই সভা—সমস্ত জগতের লোককে কৌমার্য্যব্রতে দীক্ষিত কর্‌বার জন্যে নয়। আমাদের এই জাল অনেক লোক্‌কে ধর্‌বে এবং অধিকাংশকেই পরিত্যাগ কর্‌বে, অবশেষে দীর্ঘকাল পরীক্ষার পর দুটি চারটি লোক থেকে যাবে। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তোমরাই কি সেই দুটি চারিটী লোক তবে স্পর্ধাপূর্ব্বক কে নিশ্চয়রূপে বল্‌তে পারে। হাঁ আমরা জালে আকৃষ্ট হয়েছি এই পর্য্যন্ত কিন্তু পরীক্ষায় শেষ পর্য্যন্ত টিঁক্‌তে পারব কি না তা অন্তর্যামীই জানেন। কিন্তু আমরা কেউ টিক্‌তে পারি বা না পারি, আমরা একে একে স্খলিত হই বা না হই, তাই বলে আমাদের এই সভাকে পরিহাস করবার অধিকার কারো নেই। কেবল যদি আমাদের সভাপতি মশায় একমাত্র থাকেন, তবে আমাদের এই পরিত্যক্ত সভাক্ষেত্র সেই এক তপস্বীর তপঃপ্রভাবে পবিত্র উজ্জ্বল