পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

হয়ে থাকবে, এবং তাঁর চিরজীবনের তপস্যার ফল দেশের পক্ষে কখনই ব্যর্থ হবে না।

 কুণ্ঠিত সভাপতি কার্য্যবিবরণের খাতা খানি পুনর্ব্বার তাঁহার চোখের অত্যন্ত কাছে ধরিয়া অন্যমনস্কভাবে কি দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু পূর্ণর এই বক্তৃতা যথাস্থানে যথাবেগে গিয়া পৌঁছিল। চন্দ্রমাধব বাবুর একাকী তপস্যার কথায় নির্ম্মলার চক্ষু ছল ছল করিয়া আসিল এবং বিচলিত বালিকার চাবির গোছর ঝনক শব্দ উৎকর্ণ পূর্ণকে পুরস্কৃত করিল।

 বিপিন চুপ করিয়া ছিল, এতক্ষণ পরে সে তাহার জলদমন্দ্র গম্ভীর কণ্ঠে কহিল—আমরা এ সভার যোগ্য কি অযোগ্য, কালেই তার পরিচয় হবে, কিন্তু কাজ করাও যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় তবে সেটা কোনো এক সময়ে শুরু করা উচিত। আমার প্রশ্ন এই— কি কর্‌তে হবে?

 চন্দ্রমাধব উজ্জ্বল উৎসাহিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, এই প্রশ্নের জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম, কি কর্‌তে হবে? এই প্রশ্ন যেন আমাদের প্রত্যেককে দংশন করে অধীর করে তোলে, কি কর্‌তে হবে? বন্ধুগণ কাজই একমাত্র ঐক্যের বন্ধন। এক সঙ্গে যারা কাজ করে তারাই এক! এই সভায় আমরা যতক্ষণ সকলে মিলে একটা কাজে নিযুক্ত না হব ততক্ষণ আমরা যথার্থ এক হতে পারব না। অতএব বিপিন বাবু, আজ এই যে প্রশ্ন কর্‌চেন—কি করতে হবে—এই প্রশ্নকে নিব্‌তে দেওয়া হবে না। সভ্যমহাশয়গণ, আপনারা উত্তর করুন্ কি করতে হবে?

 দুর্ব্বল দেহ শ্রীশ অস্থির হইয়া বলিয়া উঠিল আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন কি করতে হবে, আমি বলি আমাদের সকলকে সন্ন্যাসী হয়ে ভারতবর্ষের দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে দেশহিতব্রত নিয়ে বেড়াতে হবে, আমাদের দলকে পুষ্ট করে তুল্‌তে হবে, আমাদের এই সভাটিকে সূক্ষ্ম সূত্র স্বরূপ করে সমস্ত ভারতবর্ষকে গেঁথে ফেলতে হবে।