পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

তোমার এমন অসামান্য ক্ষমতা কিন্তু গান গুলো শেষ কর না কেন? অক্ষয় ফস্ করিয়া তান ধরিয়া তাহার জবাব দিতেন―

সখা, শেষ করা কি ভালো?
তেল ফুরোবার আগেই আমি নিবিয়ে দেব আলো!

 এইরূপ ব্যবহারে সকলে বিরক্ত হইয়া বলে অক্ষয়কে কিছুতেই পারিয়া উঠা যায় না।

 পুরবালাও ত্যক্ত হইয়া বলিলেন—ওস্তাদজি থাম! আমার প্রস্তাব এই যে, দিনের মধ্যে একটা সময় ঠিক কর যখন তোমার ঠাট্টা বন্ধ থাকবে,—যখন তোমার সঙ্গে দুটো একটা কাজের কথা হতে পারবে!

 অক্ষয়। গরীবের ছেলে, স্ত্রীকে কথা বল্তে দিতে ভরসা হয় না, পাছে খপ্ করে বাজুবন্দ চেয়ে বসে! (আবার গান)

পাছে চেয়ে বসে আমার মন,
আমি তাই ভয়ে ভয়ে থাকি,
পাছে চোখে চোখে পড়ে বাঁধা
আমি তাইত তুলিনে আঁখি!

 পুরবালা। তবে যাও!

 অক্ষয়। না, না, রাগারগি না! আচ্ছ যা বল তাই শুনব! খাতায় নাম লিখিয়ে তোমার ঠাট্টানিবারিণী সভার সভ্য হব! তোমার সাম্নে কোন রকমের বেয়াদবী করব না!—তা কি কথা হচ্ছিল! শ্যালীদের বিবাহ! উত্তম প্রস্তাব!

 পুরবালা গম্ভীর বিষণ্ণ হইয়া কহিল—দেখ, এখন বাবা নেই। মা তোমারি মুখ চেয়ে আছেন। তোমারি কথা শুনে এখনো তিনি বেশি বয়স পর্য্যন্ত মেয়েদের লেখা পড়া শেখাচ্চেন। এখন যদি সৎপাত্র না জুটিয়ে দিতে পার তাহলে কি অন্যায় হবে ভেবে দেখ দেখি!

 অক্ষয় দুর্লক্ষণ দেখিয়া পূর্ব্বাপেক্ষ কথঞ্চিৎ গম্ভীর হইয়া কহিলেন—