পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৫৫

 বিপিন। অর্থাৎ একদল কার্ত্তিককে ময়ুরের উপর চড়ে রাস্তায় বেরতে হবে।

 শ্রীশ। ময়ূর না পাওয়া যায়, ট্রাম, আছে, পদব্রজেও নারাজ নই। কুমার সভা মানেই ত কার্ত্তিকের সভা। কিন্তু কার্ত্তিক কি কেবল সুপুরুষ ছিলেন? তিনিই ছিলেন স্বর্গের সেনাপতি।

 বিপিন। লড়াইয়ের জন্যে তাঁর দুটি মাত্র হাত, কিন্তু বক্তৃতা করবার জন্যে তাঁর তিন জোড়া মুখ।

 শ্রীশ। এর থেকে প্রমাণ হয় আমাদের আর্য্য পিতামহরা বাহুবল অপেক্ষা বাক্যবলকে তিন গুণ বেশী বলেই জান্‌তেন। আমিও পালোয়ানীকে বীরত্বের আদর্শ বলে মানিনে।

 বিপিন। ওটা বুঝি আমার উপর হ’ল?

 শ্রীশ। ঐ দেখ! মানুষকে অহঙ্কারে কি রকম মাটি করে। তুমি ঠিক করে রেখেচ, পালোয়ান বল্লেই তোমাকে বলা হল! তুমি কলিযুগের ভীমসেন! আচ্ছা এস, যুদ্ধং দেহি! একবার বীরত্বের পরীক্ষা হয়ে যাক্!

 এই বলিয়া দুই বন্ধু ক্ষণকালের জন্য লীলাচ্ছলে হাত কাড়াকাড়ি করিতে লাগিল। বিপিন হঠাৎ “এইবার ভীমসেনের পতন” বলিয়া ধপ করিয়া শ্রীশের কেদারাটা অধিকার করিয়া তাহার উপরে দুই পা তুলিয়া দিল; এবং “উঃ অসহ তৃষ্ণা” বলিয়া লেমনেডের গ্লাসটি এক নিঃশ্বাসে খালি করিল। তখন শ্রীশ তাড়াতাড়ি কুন্দফুলের মালাটি সংগ্রহ করিয়া—“কিন্তু বিজয় মাল্যটি আমার” বলিয়া সেটা মাথায় জড়াইল এবং বেতের মোড়াটার উপরে বসিয়া কহিল আচ্ছা ভাই সত্যি বল, একদল শিক্ষিত লোক যদি এই রকম সংসার পরিত্যাগ করে’ পরিপাটি সজ্জায় প্রফুল্ল প্রসন্ন মুখে গানে এবং বক্তৃতায় ভারতবর্ষের চতুর্দ্দিকে শিক্ষা বিস্তার করে’ বেড়ায় তাতে উপকার হয় কি না?