পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 বিপিন এই তর্কটা লইয়া বন্ধুর সঙ্গে আর ঝগড়া করিতে ইচ্ছা করিল না―কহিল, আইডিয়াটা ভাল বটে!

 শ্রীশ। অর্থাৎ শুন্‌তে সুন্দর কিন্তু কর্ত্তে অসাধ্য! আমি বল চি অসাধ্য নয় এবং আমি দৃষ্টান্ত দ্বারা তার প্রমাণ করব। ভারতবর্ষে সন্ন্যাসধর্ম্ম বলে একটা প্রকাণ্ড শক্তি আছে, তার ছাই ঝেড়ে তার ঝুলিটা কেড়ে নিয়ে তার জটা মুড়িয়ে তাকে সৌন্দর্য্য এবং কর্ম্মনিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত করাই চিরকুমার সভার একমাত্র উদ্দেশ্য। ছেলে পড়ান এবং দেশলাইয়ের কাটি তৈরি করবার জন্যে আমাদের মত লোক চিরজীবনের ব্রত অবলম্বন করে নি। বল বিপিন, তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি আছ কি না?

 বিপিন। তোমার সন্ন্যাসীর যে রকম চেহারা গলা এবং আস বাবের প্রয়োজন আমার ত তার কিছুই নেই। তবে তল্পিদার হয়ে পিছনে যেতে রাজি আছি! কানে যদি সোনার কুণ্ডল, অন্তত চোখে যদি সোনার চস্‌মাটা পরে’ যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াও তা হলে একটা প্রহরীর দরকার, সে কাজটা আমার দ্বারা কতকটা চল্‌তে পারবে!

 শ্রীশ। আবার ঠাট্টা।

 বিপিন। না ভাই ঠাট্টা নয়। আমি সত্যিই বলছি তোমার প্রস্তাবটাকে যদি সম্ভবপর করে’ তুলতে পার তা হলে খুব ভালই হয়। তবে এরকম একটা সম্প্রদায়ে সকলেরই কাজ সমান হতে পারে না, যার যেমন স্বাভাবিক ক্ষমতা সেই অনুসারে যোগ দিতে পারে।

 শ্রীশ। সে ত ঠিক কথা। কেবল একটি বিষয়ে আমাদের খুব দৃঢ় হতে হবে, স্ত্রীজাতির কোন সংস্রব রাখ্‌ব না!

 বিপিন। মাল্যচন্দন অঙ্গদকুণ্ডল সবই রাখতে চাও কেবল ঐ একটা বিষয়ে অত বেশী দৃঢ়তা কেন?

 শ্রীশ। ঐ গুলো রাখচি বলেই দৃঢ়তা। যে জন্যে চৈতন্য তাঁর অনুচরদের স্ত্রীলোকের সঙ্গ থেকে কঠিন শাসনে রেখেছিলেন। তাঁর