পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

বুদ্ধির প্রবীণতা বাহ্য নবীনতা দিয়ে গোপন করে রেখেছেন। আপনারা কিছু বিস্মিত হয়েছেন দেখচি; হবার কথা! এঁকে দেখে মনে হয় বালক, কিন্তু আমি আপনাদের কাছে জামিন রইলুম―ইনি বালক নন্।

 চন্দ্র। এঁর নাম?

 রসিক। শ্রীঅবলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়।

 শ্রীশ বলিয়া উঠিল, অবলাকান্ত?

 রসিক। নামটি আমাদের সভার উপযোগী নয় স্বীকার করি। নামটির প্রতি আমারও বিশেষ মমত্ব নেই—যদি পরিবর্ত্তন করে বিক্রম সিংহ বা ভীমসেন বা অন্য কোন উপযুক্ত নাম রাখেন তাতে উনি আপত্তি করবেন না। যদিচ শাস্ত্রে আছে বটে স্বনামা পুরুষো ধন্যঃ—কিন্তু উনি অবলাকান্ত নামটির দ্বারাই জগতে পৌরুষ অর্জ্জন করতে ব্যাকুল নন।

 শ্রীশ কহিল—বলেন কি মশায়! নাম ত আর গায়ের বস্ত্র নয়, যে বদল করলেই হ’ল।

 রসিক। ওটা আপনাদের একেলে সংস্কার শ্রীশ বাবু। নামটাকে প্রাচীনেরা পোষকের মধ্যেই গণ্য করতেন। দেখুন না কেন, অর্জ্জুনের পিতৃদত্ত নাম কি, ঠিক করে বলা শক্ত,—পার্থ, ধনঞ্জয়, সব্যসাচী, লোকের যখন যা মুখে আস্‌ত তাই বলেই ডাক্‌ত। দেখুন, নামটাকে আপনার বেশী সত্য মনে করবেন না;—ওঁকে যদি ভুলে আপনি অবলাকান্ত নাও বলেন ইনি লাইবেলের মোকদ্দমা আনবেন না।

 শ্রীশ হাসিয়া কহিল—আপনি যখন এতটা অভয় দিচ্চেন তখন অত্যন্ত নিশ্চিন্ত হলুম—কিন্তু ওঁর ক্ষমাগুণের পরিচয় নেবার দরকার হবে না—নাম ভুল করব না মশায়।

 রসিক। আপনি না করতে পারেন কিন্তু আমি করি মশায়। উনি আমার সম্পর্কে নাতি হন—সেই জন্যে ওঁর সম্বন্ধে আমার রসনা কিছু শিথিল, যদি কখনো এক বল্‌তে আর বলি সেটা মাপ করবেন।