পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 নীরু। চমৎকার চাটু-চাতুর্য্য!

 অক্ষয়। এর মধ্যে চৌর্য্যবৃত্তি নেই, চর্ব্বিত চর্ব্বণ শূন্য।

 নৃপ। (সবিস্ময়ে) আচ্ছা মুখুজ্জেমশায় রোজ রোজ তুমি এই রকম লম্বা লম্বা সম্বোধন রচনা কর? তাই বুঝি দিদিকে চিঠি লিখতে এত দেরী হয়?

 অক্ষয়। ঐ জন্যেই ত নৃপর কাছে আমার মিথ্যে কথা চলে না। ভগবান যে আমাকে সদ্য সদ্য বানিয়ে বলবার এমন অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন সেটা দেখছি খাটাতে দিলে না! ভগ্নীপতির কথা বেদবাক্য বলে বিশ্বাস করতে কোন্ মনুসংহিতায় লিখেছে বল্ দেখি?

 নীর। রাগ কোরো না, শান্ত হও মুখুজ্জেমশায়, শান্ত হও! সেজ দিদির কথা ছেড়ে দাও, কিন্তু ভেবে দেখ, আমি তোমার আধখানা কথা সিকি পয়সাও বিশ্বাস করিনে, এতেও তুমি সান্ত্বনা পাও না?

 নৃপ। আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, সত্যি করে বল, দিদির নামে তুমি কখনো কবিতা রচনা করেছ?

 অক্ষয়। এবার তিনি যখন অত্যন্ত রাগ করেছিলেন তখন তাঁর স্তব রচনা করে গান করেছিলুম―

 নৃপ। তার পরে?

 অক্ষয়। তার পরে দেখলুম, তাতে উল্টো ফল হল, বাতাস পেয়ে যেমন আগুন বেড়ে ওঠে তেমনি হল―সেই অবধি স্তব রচনা ছেড়েই দিয়েছি।

 নৃপ। ছেড়ে দিয়ে কেবল গয়লা বাড়ীর হিসেব লিখ্‌চ। কি স্তব লিখেছিলে মুখুজ্জেমশায় আমাদের শোনাও না।

 অক্ষয়। সাহস হয় না, শেষকালে আমার উপরওয়ালার কাছে রিপোর্ট করবি!

 নৃপ। না আমরা দিদিকে বলে দেব না।