পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বতমান বঙ্গ সাহিত্য অনেকে বলে থাকেন যে, আমাদের সাহিত্যের সত্যযােগ উনবিংশ শতাব্দীর সঙ্গেই এ দেশ থেকে অন্তধান হয়েছে। এখন ঘোর কলি, কেননা এ যাগে সাহিত্যের যে একটিমাত্র পদ অবশিস্ট আছে সে হচ্ছে সমালোচনা এবং আমাদের যতকিছু লাফাঝাঁপি সে-সব ঐ এক পায়ের উপর, তার পর ভবিষ্যতে যখন উক্ত পদের আস্ফালন বন্ধ হবে, তখন মন্বন্তর। এ-সব কথা শনে আমি হতাশ হয়ে পড়ি নে, কেননা অতীতের চাইতে ভবিষ্যতের প্রতি আমার ভক্তি ও ভালোবাসা দইই বেশি আছে। আমরা ইভলিউশন-পন্থী; সতরাং আমাদের সত্যযােগ পিছনে পড়ে নেই, সমখে গড়ে উঠছে। আমাদের কলিপিত ধরার সবগ অতীতের ভূই ফাঁড়ে উঠবে না, বতমানের ভিত্তির উপরেই প্রতিষ্ঠিত হবে; সতরাং আমাদের কাছে অতীতের অপেক্ষা বর্তমান ঢের বেশি মাল্যবান। অতীতের সাহায্যে আমরা বড়ো জোর ব্যুতমানের ব্যাখ্যা করতে পারি, তাও আবার আংশিক ভাবে, কিন্তু বতমানের সাহায্যে আমরা ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারি। আবিস্কার করার চাইতে নির্মাণ করা যেপরিমাণে শ্রেষ্ঠ অতীতের জ্ঞানের চাইতে বতমানের জ্ঞান লাভ করা সেই পরিমাণে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু দঃখের বিষয় এই যে, মানষ বত মানকেই সবচাইতে কম চেনে এবং কম জানে। এ পথিবীতে যা চিরপরিচিত। তাই সবচেয়ে অপরিচিত। যা চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের চোখের সমখে থাকে, তার দিকে আমরা বড়ো-একটা দক্ষিটপাত করি নে। ঐ কারণেই বর্তমানের চেহারা আমাদের চোখে পড়ে না এবং তার রােপ আমাদের মনে ধরে না। তা ছাড়া বত মান, একটি প্রবাহ, দিনের পর দিন হচেছ কালের ঢেউয়ের পরে ঢেউ, সতরাং এ বতমানের ইয়ত্তা করতে হলে কালের ঢেউ গানতে হয়। অপর পক্ষে অতীত হচ্ছে একটি জমাট নিরেট জড় পদার্থ, তার চারি দিকে ভক্তিভরে প্রদক্ষিণ করা যায়। সতরাং অতীতের গণকীর্তন করা নেহাত সহজ, বিশেষত চোখ বাজে। আর-এক কথা, সবদেশের অতীত হচ্ছে প্ৰতি জাতির পৈতৃক সন্থাবর সম্পপত্তি এবং তা সমাজের ভোগ-দখলের বিষয়, অতএব তার প্রতি সাংসারিক মনের টােনও বেশি মানও বেশি। বতমানের দভাগ্য এই যে, তা অস্থাবর। এবং তার যা ভোগ সে শােধ কম ভোগ। এই কারণে বর্তমানকে ছোঁয়া যায়, ধরা যায় না। বতমান সাহিত্য হচ্ছে বর্তমানেরই একটি অঙ্গ, কাজেই বতমান সাহিত্যিকরা গোয়ো যোগীর ন্যায় সমাজের কাছে ভিত্তি পাওয়া দরে থাক, ভিখও পান না। অথচ এই উপেক্ষিত বতমােনই যখন আমাদের আদর-ভবিষ্যতের নিভািরস্থল, তখন এ যাগের সাহিত্যের যথাসম্পভব পরিচয় নেবার চেন্টা করাটা আবশ্যক। চেন্টা করলে হয়তো এর ভিতর থেকেও একটা আশার চেহারা বার করা যেতে পারে। আমাদের পক্ষে নবসাহিত্যের নিন্দা করা যেমন সহজ, প্রশংসা করা তেমনি