পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বতমান বঙ্গ সাহিত্য NSON) কঠিন। কেননা খ্যাতনামা লেখকদের বিচার করবার অধিকার যেখানে কারো নেই, সেখানে অখ্যাতনামা লেখকদের উপরে জজ হয়ে বসবার অধিকার সকলেরই আছে। জন্মাবধি উঠতে বসতে খেতে শতে যে বস্তুর সংখ্যাতি শনে আসছি, সে বস্তু যে মহােঘ এ বিশ্ববাস অজ্ঞাতসারে আমাদের মনে বন্ধমল হয়ে যায়। গরােজনদের কোনো খাটনি নেই। যদি আমরাই চিন্তামাগে ক্লেশ করব, তা হলে গােরর দরকার কি। আর যদি আমরাই পজা করব তা হলে পরোহিতের দরকার কি। কেননা গর পরোহিতেরা সমাজের হাতে-গড়া, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক labour-saving machines। নবসাহিত্যের দভাগ্যই এই যে, তা অতীতের ডিস্লোমা নিযে আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় না ; এ সাহিত্যের মাল্য নির্ধারণ করতে হলে নিজের অনভূতি দিয়ে তা যাচাই করতে হয়, নিজের বন্ধি দিয়ে তা পরীক্ষা করতে হয়। আমরা কাজনে সে পরিশ্রমটকু করতে রাজি ? সতরাং নবসাহিত্যের প্রশংসার চাইতে নিন্দাই যে বেশির ভাগ শোনা যায়, তাতে আশ্চর্য হবার কোনো কারণ নেই। এই-সকল নিন্দাবাদের বিচারসত্রেই আমরা প্রকারান্তরে নবসাহিত্যের গণাগণের বিচার করতে চাই। নবসাহিত্যের বিরদ্ধে প্রধান অভিযোগ এই যে, তা অপৰ্যাপ্ত ও সস্তা, বিশেষত্বহীন ও প্রতিভাহীন, চুটকি ও নকল। আমি একে একে এই-সকল অভিযোগের উত্তর দিতে চেন্টা করব। নবসাহিত্যের পরিমাণ যে অপৰ্যাপতি তা অস্বীকার করবার জো নেই। বতমানে এত নিত্যনতেন পদস্তক এবং পাস্তিকা, পত্র এবং পত্রিকা ভূমিষ্ঠ হচ্ছে যে, এ যাগের তুলনায় বঙ্গদর্শনের যাগের বঙ্গসরস্বতীকে বন্ধ্যা বললেও অত্যুক্তি হয় না। উনবিংশ শতাব্দীতে আমাদের নামে এই অপবাদ ছিল যে, বাঙালি রসনাসব সব, বিংশ শতাব্দীতে আমরা যদি কিছ হই তো রচনাসব সম্ভব। এমন-কি, এই নবযগধমের শাসনে গত যাগের অনেক পাকা বক্তারা কোঁচে। আবার লেখক হয়ে উঠছেন নইলে যে তাঁদের গাদে পড়ে থাকতে হয়। এক কথায়, আজকের দিনে বাংলার সাহিত্যসমাজ লোকে লোকারণ্য ; এবং এ জনতার মধ্যে আবালবদ্ধবনিতা সকলেই আছেন। বঙ্গ সাহিত্যের মন্দিরে বঙ্গমহিলারা যে শােধ প্রবেশ লাভ করেছেন তা নয়, অনেকখানি জায়গা জড়ে বসেছেন। বসেছেন বলা বোধ হয় ঠিক হল না, কারণ এ স্থলে এরা বসে নেই, পরিষদের সঙ্গে সমানে পা ফেলে চলছেন। ইংরেজি রাজনীতির ভাষায় যাকে বলে peaceful penetration, সেই পদ্ধতি অনসরণ করে সত্ৰীজাতি আমাদের সাহিত্যরাজ্য ধীরে ধীরে এতটা দখল করে নিচেছন যে, আমার সময়ে সময়ে আশঙ্কা হয় যে, এ রাজ্য হয়তো ক্ৰমে নারীরাজ্য হয়ে উঠবে। এ আশঙ্কা যে নিতান্ত অমলক নয়, তার প্রমাণ গত মাসের ‘ভারতবর্ষে’র প্রতি দন্টিপাত করলেই প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। সাহিত্যসমাজের এই পরদাপাটিতে অন্তত চল্লিশ জন ভদ্রমহিলা যোগদান করেছিলেন। যে দেশে সন্ত্রীশিক্ষা নেই, সে দেশে সত্ৰীসাহিত্যের এতটা প্রসার ও পিসাের বদ্ধির ভিতর কি একটি রহস্য নেই? এতেই কি প্রমাণ হয় না যে, এই নব