পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ8O প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ তখন দেখা যায় যে, অপর জাতির লোেকরাও আসলে মানষ, এবং অনেকটা আমাদের মতোই মানষ। সতরাং বিদেশী সাহিত্যের চর্চায়, শািন্ধ আমাদের মন নয়, হৃদয়ও উদারতা লাভ করে; আমরা শােধ মানসিক নয়, নৈতিক উন্নতিও লাভ করি। অতএব মনোজগতে যথার্থ মন্তি লাভ করতে হলে আমাদের পক্ষে বিশবিমানবের মনের সংস্পশে আসা দরকার। সত্য কথা এই যে, মনোজগতে বৈচিত্র্য থাকলেও কোনো দেশভেদ নেই ; আমরা আমাদের মনগড়া বেড়া দিয়ে তার মনগড়া ভাগবাটোয়ারা কাঁয়, সত্যের আলোকে এ-সব অলীক প্রাচীর কুয়াশার মতো মিলিয়ে যায়। এ কথা আমি বিশ বাস করি বলে, আমার মতে আমাদের পক্ষে শােধ ইংরেজি নয়, সেইসঙ্গে ফরাসি এবং জমােনও শেখা দরকার। ইংরেজি ভাষা অবশ্য সমগ্র ইউরোপের সমস্ত জ্ঞান ও চিন্তা আমাদের মনের ঘরে পৌছে দিচ্ছে, কিন্তু অনাবাদের মারফত সাহিত্য পড়া গ্রামোফোনের মারফত গান শোনার মতো; অর্থাৎ ও উপায়ে মানষের প্রাণের কথা আমাদের কানে যন্ত্রধবনির আকারে এসে পৌছয়। সে যাই হোক, আজকের দিনে ইংরেজির চর্চা ত্যাগ করলে বিশবিমানবের বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার সর্বহস্তে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাংলা আমাদের শিক্ষার প্রধান ভাষা হলে ইংরেজি বাণী আর প্ৰভুসম্মিত থাকবে না, সািহদা সম্মিত হয়ে উঠবে; প্ৰভু তখন যথার্থী সখা হয়ে উঠবে। আর-একটি কথা বলেই আমার প্রবন্ধ শেষ করব। S8 আজকের দিনে ভারতবাসীর মাখে ‘স্বরাজ” ছাড়া অপর কোনো কথা নেই। দেশের সাবরাজ্য পরের কাছে, হাত পেতে পাওয়া যায় কি যায় না, তা আমি বলতে পারি নে। কিন্তু এ কথা আমি খাব জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে, মনের স্বরাজ্য নিজ হাতে গড়ে তুলতে হয়। তার পর দেশের স্বরাজ্য ইংরেজি ভাষার প্রতাপে লাভ করা গেলেও মনের স্বরাজ্য একমাত্র স্বভাষার প্রসাদেই লাভ করা যায়। সতরাং সাহিত্যচৰ্চা আমাদের পক্ষে একটা শখ নয়, জাতীয় জীবন গঠনের সব শ্রেষ্ঠ উপায়। কেননা এ ক্ষেত্রে যা-কিছ গড়ে উঠবে তার মালে থাকবে জাতীয় আত্মা এবং জাতীয় কৃতিত্ব। এক জাতের বন্ধিমান লোক আছেন যাঁরা বলেন যে, আমাদের পক্ষে একটা বড়ো সাহিত্য গড়ে তোেলবার চেন্টাটা সম্পর্ণে ব্যথা। তাঁদের মতে সাহিত্যের অভু্যুদয় জাতীয় অভু্যুদয়কে অনসরণ করে। এবং নিজের মতের সপক্ষে তাঁরা পেরিক্লিসের এথেন্স, অগাস্টাসের রোম, এলিজাবেথের ইংলন্ড এবং চতুৰ্দশ লাইয়ের ফ্রান্সের নজির দেখান। এ মত গ্রাহ্য করার অর্থ আত্মার উপর বাহ্যবস্তুর শক্তির প্রাধান্য স্বীকার করা। কিন্তু অদন্টবাদ মানষের পরিষকারকে খাব করে, অতএব বিজ্ঞানসম্মত হলেও তা অগ্রাহ্য। সখের বিষয়, এ মত মেনে নেবার কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ নেই। যদি সাহিত্যের অভু্যদয় একমাত্র রাষ্ট্ৰশক্তির উপর নিভাির করত, তা হলে অন্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে জমানিতে অমন অপােব সাহিত্যের সন্টি হত না, কারণ সে যাগে জমানির রাষ্ট্ৰীয় শক্তি শন্যের কোঠায় গিয়ে পড়েছিল।