পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ভবিষ্যৎ S8S নেপোলিয়ন যেদিন সমবেত জমান জাতিকে পদদলিত করে জেনা নগরে প্রবেশ করেন, সেদিন সে নগরে গোটে ও হেগেল উভয়েই উপস্থিত ছিলেন, এবং সম্পভবত এদের একজন কাব্যের, আর-একজন দর্শনের ধ্যানে মগন ছিলেন; কেননা বিজয়ী ফরাসিদের তোপের গজািন যে এদের যোগনিদ্ৰা ভংগ করেছিল। এ কথা ইতিহাসে লেখে না। আর এ যাগে জমান জাতি সাংসারিক হিসাবে অপােব অভু্যদয় লাভ করেছে কিন্তু জমােন সাহিত্য সে অভু্যদয়ের অনসরণ করে নি। বরং সত্য কথা এই যে, সে দেশে লক্ষীর আস্ফালনে সরস্বতী পষ্ঠভঙ্গ দিয়েছেন। আসল ঘটনা এই যে, যােগবিশেষে দেশবিশেষের জাতীয় আত্মা যখন সজ্ঞান ও সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন কি সাহিত্য কি সমাজ সবই এক নাতন শক্তি লাভ করে, এক নািতন মাতি ধারণ করে। তখন জাতির আত্মশক্তি নানা দিকে নানা ক্ষেত্রে বিকশিত ও প্রস্ফটিত হয়ে ওঠে। পেরিক্লিসের এথেন্স প্রভাতি এই সত্যের নিদর্শন। কিন্তু এমন হওয়া আশ্চর্য নয় যে, জাতীয় আত্মা প্রবন্ধ হয়ে উঠলেও অবস্থার গণে বা দোষে তা বিশেষ একটা দিকেই মাথা তুলতে পারে, হয় সাহিত্যের দিকে, নয় শিল্পবাণিজ্যের দিকে। সতরাং জাতি হিসাবে আমরা শক্তিশালী নই বলে আমাদের সাহিত্যসান্টির চেন্টা যে বিড়ম্ববনা, তা হতেই পারে না। তা ছাড়া সাহিত্যের প্রধান কােজই যখন জাতীয় আত্মাকে প্রবন্ধ করা, তখন তার অবসর চিরকালই আছে। আমার শেষ কথা এই যে, বাংলার ভবিষ্যৎ ও বাঙালির ভবিষ্যং মলে একই বস্তু! অগ্রহায়ণ ১৩২৪