পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sl প্রবন্ধসংগ্ৰহ মানষেকে চিরকাল মগধ করে এসেছে এবং সম্পভবত চিরকাল করবে। এ-সকল বস্তু সমাজকে উন্নত না হোক, অলংকৃত করে। এবং এ-সকল গণ কাব্য ও কলার চৰ্চা ব্যতীত রক্তমাংসের শরীরে আপনা হতে ফটে ওঠে না। তবে এ কথা ঠিক যে, প্রাচীন সভ্যতা এ-সকল গণের যতটা মাল্য দিত, আমরা ততটা দিই নে। তার কারণ, সেকালের সভ্যতা ছিল অ্যারিসেন্টাক্তাটিক, আর একালের সভ্যতা হতে চাচেছ ডেমোক্রাটিক; সেকালে তাঁরা চাইতেন আকার, আমরা চাই বস্তু। তাঁরা দেখতেন মানষের ব্যবহার, আমরা দেখতে চাই তার ভিতরটা। তাঁরা ছিলেন রপভক্ত, আমরা গণলব্ধ। ক্ল্যাসিক সাহিত্যের সঙ্গে আধনিক সাহিত্যের তুলনা করলে এ প্ৰভেদ সকলেরই চোখে ধরা পড়বে। এ যাগের সাহিত্যমাত্রেই রোমাণ্টিক, অর্থাৎ তাতে আটের ভাগ কম এবং আত্মার ভাগ বেশি। এর কারণ, এ যাগের কবিরা কাব্যে আত্মপ্রকাশ করেন; এ যাগের কবি জনগণের প্রতিনিধিও নন, মািখপাত্ৰও নন; সতরাং সে কবির মন নিজের মন, লৌকিক মানও নয়। সামাজিক মনও নয়। আর সেকালের কবিরা সামাজিকদের মনোরঞ্জন করতে চেন্টা করতেন। সেকালোব সামাজিকেরা কলাবিৎ ছিলেন বলে সেকালের কবিরা রচনায় বস্তুর অপেক্ষা তার আকারের দিকেই বেশি মনোযোগ দিতে বাধ্য হতেন। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্রে দেখতে পাই, কবি কি বললেন, তার চাইতে কি ভাবে বললেন তার মযাদা ঢের বেশি। সতরাং নাগরিকদের কাব্যচর্চার ফলে প্রাচীন সাহিত্য যে আর্টিস্টিক হয়েছে, এ কথা নিভয়ে বলা যেতে পারে। এই-সব কারণে আমরা সম্বীকার করতে বাধ্য যে, নাগরিকদের কাব্যচৰ্চা একেবারে নিম্ৰফল হয় নি, কেননা তার গণে ক্ল্যাসিক সাহিত্য অসামান্য সষমা ও সামঞ্জস্য লাভ করেছে। কাব্যে আর্টের মাল্য যে কত বড়ো, সে আলোচনায় আজ প্রবত্ত হব না, কেননা সে আলোচনা দা কথায় শেষ করবার জো নেই। বহ, যক্তি বহন তকের সাহায্যে ওসত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেননা আমি পাবেই বলেছি, এ যাগের ডেমোক্রাটিক আত্মা আটকে উপেক্ষা করে, অবজ্ঞা করে, সম্পভবত মনে মনে হিংসাও করে; বোধ হয়। এই কারণে যে, আর্টের গায়ে আভিজাত্যের ছাপ চিরস্থায়ী রাপে বিরাজ করে। অথচ ডেমোক্কাসির এ সত্য সর্বদা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, লৌকিক মন বস্তুগত বলেই তা মেটিরিয়ালিজমের দিকে সহজেই ঝোঁকে। এ বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আটের চর্চা আবশ্যক। V বই পড়ার শখটা মানষের সবশ্রেষ্ঠ শাখা হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাই নে। প্রথমত সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না, কেননা আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নাই; দ্বিতীয়ত অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবেন, কেননা আমাদের এখন ঠিক শখ করবার সময় নয়। আমাদের এই রোগশোকদঃখদারিদ্র্যের দেশে জীবনধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সে জীবনকে সন্দর করা মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছেই নিরর্থক এবং সম্পভবত নিমািমও