পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

س--------س( চিত্রাঙ্গদা। প্রেসিডেন্সি কলেজ রবীন্দ্রপরিষদে পঠিত রবীন্দ্রপরিষদের পক্ষ থেকে শ্ৰীমান সোমনাথ মৈত্র আমাকে আপনাদের কাছে রবীন্দুনাথের কাব্যের সম্পবন্ধে দ-চার কথা বলবার জন্য বহবার অনরোধ করেছেন। তাঁর অনরোধ রক্ষা করতে আমি সদাই প্রস্তুত, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি বরাবরই ইতস্তত করেছি। কারণ রবীন্দ্রনাথের কাব্যের সমালোচনা করতে আমি ভয় পাই। এ বিষয়ে যখনই কিছ বলবার প্রবত্তি মনে জেগে ওঠে, তখনই এ প্রশনও আমার মনে উদয় হয় যে, কাব্য সমালোচনা করবার সার্থকতা কি ? আমি জানি যে, সমালোচনা জিনিসটে সাহিত্যজগতের অনেকখানি জায়গা জড়ে রয়েছে। বরং আমাদের স্কুলকলেজে কবির চাইতে সমালোচকেরই প্রাধান্য বেশি। প্রসিদ্ধ ফরাসি দার্শনিক তেইন-এর ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস আমরা অনেকেই পড়েছি। কেননা ইংরেজি সাহিত্যের এম. এ. পরীক্ষায় উত্তীণ হবার জন্য সে বই আমরা অধ্যয়ন করতে ও যথাসাধ্য কণঠস্থ করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু উন্ত বিপােল সাহিত্যের সঙ্গে সাক্ষাৎপরিচয় আমাদের ক'জনের আছে? এ ক্ষেত্রে সমালোচনা কাব্যের রসাসবাদ করবার পক্ষে একটি অন্তরায় মাত্র। কোনো বিশেষ ভাষার সমগ্র কাব্যের ইতিহাসের কথা ছেড়ে দিলেও একটি বিশেষ কবির কাব্যের রসাসবাদ করবার পক্ষেও তার উত্তরােপ সমালোচনা তেমন অন্যকমল নয়। গেরাফিনাস Gervinus অথবা Dowden ডাউডেনের সমালোচনা পড়ে ক'জন পাঠক শেকসপীয়ারের কাব্যের রসগ্রাহী হয়েছেন? আমরা যখন তেইন পড়ি অথবা গেরাফিন পড়ি, তখন আসলে সমাজ ও সংসার সম্পবন্ধে তাঁদের ফিলসফিই পড়ি। এ জাতীয় ঐতিহাসিক দার্শনিক সমালোচনার গলদ এই যে, কাব্যের আত্মা দেশকালের মধ্যে আবদ্ধ নয়, আর কাব্যরসিক মাত্রই জানে যে, কাব্য হচ্ছে ফিলসফির বহির্ভূত, কারণ মানবাত্মার যে মতির সাক্ষাৎ কাব্যে পাওয়া যায়, তার সাক্ষাৎ দর্শনে মেলে না। R আমার কথা ভুল বঝবেন না। আমি এ কথা বলতে চাই নে যে, কবি ফিলাসফার হতে পারে না, আর ফিলাসফার কবি হতে পারে না। পথিবীতে এমন কবিও আছেন যাঁকে লোকে মহাদার্শনিক মনে করে, অপর পক্ষে এমন দার্শনিক আছেন যাঁকে লোকে মহাকবি মনে করে। পেলিটোর দর্শন তো কাব্য বলে ইউরোপে বহনকাল থেকে গণ্য হয়েছে। এমন-কি, স্পিনোজার এথিকস, জিয়োমেট্রির