পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VISIVori RSS আমার মনে হয় যে, ভারতচন্দ্রের জাতি ও সম্পত্তির উপর কটাক্ষ করবার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ইণ্ডিগতে এই কথাটা সকলকে বঝিয়ে দেওয়া যে, এরােপ বংশে জন্মগ্রহণ করবার জন্যই সাহিত্যচর্চা তাঁর পক্ষে বিলাসের একটি অঙ্গমাত্র ছিল। সতরাং তিনি যে সাহিত্য রচনা করেছেন, সে হচ্ছে বিলাসী সমাজের প্রিয়। আজীবন বিলাসের মধ্যে লালিত-পালিত হলে লোকে যে-সরস্বতীর সেবা করে তাঁর নাম নাকি দন্ট সরস্বতী। লক্ষী-সরস্বতীর মিলন সাহিত্যজগতে যে অনৰ্থ ঘটায়, এমন কথা অপরের মখেও, অপর কোনো কবির সম্পবন্ধেও শত্ৰুনেছি। সতরাং ভারতচন্দ্রের জীবন কতটা বিলাসবৈভবপণ ছিল, তারও কিঞ্চিৎ পরিচয় দেওয়া অবশ্যক । S সমালোচকরা আবিস্কার করেছেন যে, আমার জীবন হচেছ একটি ট্রাজেডি। এক হিসেবে মানষমাত্রেরই জীবন একটা ট্রাজেডি এবং আমি অবশ্য সাধারণ মানবধমবজিত নই। কিন্তু কি কারণে আমার জীবন অনন্যসাধারণ ট্রাজেডি। সে কথাটা তাঁরা প্রকাশ করে বলেন নি, বোধ হয়। এই কারণে যে, আমার জীবন সখময় কি দঃখময়, তা অপরের কাছে সম্পণে অবিদিত। আর আমার জীবনের যে-পরিচয় সকলেই পান, তাকে ঠিক ট্রাজেডি বলা চলে না। আমার মাথার উপর চাল আছে, আর সে চালে খড় আছে, আমার ঘরে ক্ষধার চাইতে বেশি অশ্লেষর সংস্থান আছে, উপরন্তু আমার পরিধানের বস্ত্ৰ আছে, ইংরেজি বাংলা দরকমেরই। এর বেশি সামাজিক লোকে আর কি চায় ? আর যে progreSSএর আমরা জাতকে জাত অন্যরক্ত ভক্ত হয়ে পড়েছি, তারই বা চরম পরিণতি কি? সকলের পেটে ভাত ও পরনে কাপড়ই এ যাগে মানবসভ্যতার চরম আদর্শ নয় কি ? সম্পভবত আমার গণগ্রাহী সমালোচকদের বক্তব্য হচ্ছে, আমার সাংসারিক জীবন নয়, সাহিত্যিক জীবনই একটা মস্ত ট্রাজেডি; , অর্থাৎ আমার সাংসারিক জীবন মহা ট্রাজেডি হলে আমার সাহিত্যিক জীবন এত বড়ো প্রহসন হত না। সে যাই হোক, ও বিষয়ে ভারতচন্দ্রের জীবনের সঙ্গে আমার জীবনের কোনো মিল নেই। ভারতচন্দ্রের সাংসারিক জীবন ছিল সত্যই একটি অসাধারণ ট্রাজেডি। সংক্ষেপে ভারতচন্দ্রের জীবনের মািল ঘটনাগলি বিবত করছি, তার থেকেই প্রমাণ পাবেন যে, তাঁর জীবনের তুল্য ট্রাজেডি বাংলার কোনো সাহিত্যিকেরই জীবনে নেই। : এমন-কি, তাঁদেরও নেই যাঁদের সাহিত্যিক জীবন হচেছ একেবারে ডিভাইন কমেডি { ভারতচন্দ্রের জীবন সম্পবন্ধে আমি কোনোরীপ গবেষণা করি নি, কারণ এ জ্ঞান আমার বরাবরই ছিল যে, ভগবান আমাকে কোনো বিষয়ে গবেষণা করবার জন্য এ পথিবীতে পাঠান নি। সতরাং পরের মাখের কথার উপরই আমাকে নিভাির করতে হবে। ১৩o২ শতাব্দে দাবারকানাথ বস নামক জনৈক ব্যক্তি 'কবির জীবনী সম্পাবলিত ভারতচন্দ্রের গ্রন্থাবলী প্রকাশ করেন। এই অখ্যাতনামা প্রকাশকের প্রস্তাবনা হতে