পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSVOF ՀՏԳ কথা যােগপৎ সরল করে ও সরস করে বলতে চায় শােধ সাহিত্যিকরা ; কারণ কোনো সাহিত্যিকই আসরস ও আসরল কথা ইচেছ করে বলে না ; তবে কারো কারো স্বভাবের দোযে বিরস ও কুটিল কথা মাখ থেকে অনগাল বেরোয়। আমি এ কথা স্বীকার করতে কিছমাত্র কুণ্ঠিত নই যে, আমি সরল ও সরস ভাষায় লিখতে চেণ্টা করেছি। তবে তাতে অকৃতকার্য হয়েছি কি না, তার বিচারক আমি নই, সাহিত্যসমাজ । ভাষামাগে আমি ভারতচন্দ্রের পদানােসরণ করেছি। এর কারণ আমিও কৃষ্ণচন্দ্রের রাজধানীতে দীর্ঘকাল বাস করেছি। আমি পাঁচ বৎসর বয়সে কৃষ্ণনগরে আসি, আর পনেরো বৎসর বয়সে কৃষ্ণনগর ছাড়ি। এই দেশই আমার মাখে ভাষা দিয়েছে, অর্থাৎ এ দেশে আমি যখন আসি তখন ছিলাম। আধ-আধাভাষী বাঙাল, আর সােপাল্টভাষী বাঙালি হয়ে এ দেশ ত্যাগ করি। আমার লেখার ভিতর যদি সরলতা ও সরসতা থাকে তো সে দটি গণ এই নদীয়া জিলার প্রসাদে লাভ করেছি। ফলে বাংলায় যদি এমন কোনো সাহিত্যিক থাকেন, যিনি কহিলে সরস কথা বিরুস বাখানে, তাঁকে দীর থেকে নমস্কার করি মনে মনে এই কথা ব'লে যে, তোমার হাতিযশা আর আমার কপাল । ܠ ܟܠ ভারতচন্দ্রের লেখার ভিতর কোন কোন গণের আমরা সাক্ষাৎ লাভ করব তার সন্ধান তিনি নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেন যে— পড়িয়াছি যেই মতো লিখিবারে পারি। কিন্তু সে সকল লোকে বঝিবারে ভারি। না রবে প্রসাদগণ না হবে বসাল। অতএব কহি ভাষা যাবনী মিশাল ৷ ভারতচন্দ্র যা পড়েছিলেন তা যে লিখতে পারতেন, সে বিষয়ে তিলমাত্র সন্দেহ নেই, কারণ নিত্য দেখতে পাই হাজার হাজার লোক তা করতে পারে। এই বাংলাদেশে প্রতি বৎসর স্কুলকলেজের ছেলেরা যখন পরীক্ষা দেয় তখন তারা যেই মতো পড়িয়াছে সেই মতো লেখা ছাড়া আর কি করে ? আর যে যত বেশি পড়া দিতে পারে সে তত বেশি মাক পায়। তবে সে-সব লেখা যে, ‘বঝিবারে ভারি’ তা তিনিই হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছেন, যিনি দভাগ্যক্ৰমে কখনো কলিকাতা বিশববিদ্যালয়ের কোনো বিদ্যার পরীক্ষক হয়েছেন। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে, ও-জাতীয় লেখার ভিতর প্রসাদগণেও নেই, রসও নেই, আছে শািন্ধ বইপড়া মখস্থ পান্ডিত্য। আশা করি, বাঙালি জাতি কস্মিনকালেও বিলেতি ‘বিদ্যাভ্যাসাৎ' এতদর জড়বদ্ধি হয়ে উঠবে না যে, উক্ত জাতীয় লেখাকে সাহিত্য বলে মাথায় তুলে নতো করবে। ভারতচন্দ্র কি পড়েছিলেন ও ছিলেন জানেন ?-- ব্যাকরণ অভিধান সাহিত্য নাটক। অলঙ্কার সওগীতশাস্ত্রের অধ্যাপক ৷ পরাণ-আগমবেত্তা নাগরী পারসী।