পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জয়দেব একখানি সাহিত্যগ্রন্থকে দইরকম ভাবে আলোচনা করা যায় : প্রথমত, কাব্য স্বরপে ; দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক তত্ত্ব আবিস্কারের উপায় সবরপে। প্রথমোন্ত প্রথা অবলম্বন করিলে আমরা কেবলমাত্র তাহার দেশকাল-নিরপেক্ষ কাব্য হিসাবে দোষগণবিচারে সমর্থ হই। ন্বিতীয় প্রথা অবলম্বন করিলে আমরা তাহা যে নিদিৰ্লট সময়ে যে দেশে রচিত হইয়াছিল সেই দেশের তৎসাময়িক অবস্থাসকলের আলোচনাদবারা তাহার তাঁদেশীয় অন্যান্য কাব্যসকলের সহিত কি সম্প্ৰবন্ধ এবং তাহার দোষ ও গণ কোন কোন বিশেষ কারণপ্রসত, এই-সকল বিষয়ে জ্ঞানলাভ করিতে পারি। কাব্যের দোষগণবিচার করাই সমালোচনার মােখ্য উদ্দেশ্য। ঐতিহাসিক প্রথায় আলোচনা উক্ত বিচারের সহায়তাসাধন করে মাত্র। কিন্তু এই উভয় পদ্ধতির মিলিত সাহায্যেই যথার্থ সমালোচনা করা যায়। দুঃখেৱ সহিত স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেছি যে, সংস্কৃত সাহিত্যে তােদশ ব্যুৎপত্তি না থাকায় শ্ৰীমদভাগবত্যাদি গ্রন্থের সহিত জয়দেব-রচিত গীতগোবিন্দের কি সৰ্ম্মবন্ধ তাহা আমার নিকট অবিদিত ; এবং ভারতবর্ষের পরাবত্তি সম্পবন্ধেও আমার পরিমিত জ্ঞান, জয়দেবের সময়ে, অর্থাৎ বওগীয় রাজা লক্ষণসেনের সময়ে, বওগদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থাদির সম্যক নির্ধারণের পক্ষে যথেষ্ট নহে। সতরাং উপস্থিত প্রবন্ধে আমাকে জয়দেবের গ্রন্থ কেবলমাত্র কাব্য হিসাবে বিচার কারিয়াই ক্ষান্ত থাকিতে হইবে। আর-একটি কথা, শনিতে পাই গীতগোবিন্দের নাকি একটি আধ্যাত্মিক অৰ্থ আছে ; জীবাত্মার সহিত পরমাত্মার নিগঢ়ি মিলনের বিষয়ই নাকি রাধাকৃষ্ণের প্ৰেমবৰ্ণনাচছলে বৰ্ণিত হইয়াছে। আমি যতদব বঝিতে পারিয়াছি তাহতে এ কাব্যে আধ্যাত্মিকতার কোনো পরিচয় নাই। জয়দেব তাঁহার কাবো। যে-সকল শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন তাহার সহজ ও প্রচলিত অৰ্থ অনসারে যতটা বঝা যায় তাহাই বঝিয়াছি, কোনো নিগঢ়ি অর্থ উদভাবনাও করিতে পারি নাই। আমার কাছে কৃষ্ণ ও রাধাকে আমাদেরই মতো রক্তমাংসে-গঠিত মানষে বলিয়া বোধ হইয়াছে এবং তাঁহাদের প্রেমকেও সত্ৰীপরাষঘটিত সাধারণ মানবপ্রেম বলিয়াই বঝিয়াছি। যদি যথার্থই একটি সগভীর আধ্যাত্মিক ভাল S