পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গভাষা বনাম বাবা-বাংলা ওরফে সাধভাষা SRV 6k ব্যাকরণে। সতরাং বাংলায় এবং সংস্কৃতে আকৃতিগত মিল থাকলেও জাতিগত কোনোরমােপ মিল নাই। প্রথমটি হচ্ছে analytic, দ্বিতীয়টি inflectional ভাষা। সতরাং বাংলাকে সংস্কৃতের অন্যরাপ করে গড়ে তুলতে চেন্টা করে আমরা যে বঙ্গ ভাষার জাতি নন্ট করি, শােধ তাই নয়, তার প্রাণ বধ করবার উপক্ৰম করি। এই কথাটি সপ্রমাণ করতে হলে এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত প্রবন্ধ লিখতে হয়, সতরাং এ স্থলে আমি শােধ কথাটার উল্লেখ মাত্র করে ক্ষান্ত হলাম। বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে সহজ জ্ঞানেতেই জানা যায়, উক্ত দাই ভাষার চালের পার্থক্য ঢের। সংস্কৃতের হচ্ছে “করিরাজবিনিন্দিত মন্দগতি', কিন্তু বাংলা, গণেী লেখকের হাতে পড়লে, দলকি কদম ছারািতক সব চালেই চলে। শ্ৰীযন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যৌবনকালে লিখিত এবং সদ্যপ্রকাশিত ছিন্নপত্র পড়লে সকলেই দেখতে পাবেন যে, সাহস ক'রে একবার রাশ আলগা দিতে পারলে নিপণ এবং শক্তিমান লেখকের হাতে বাংলা গদ্য কি বিচিত্র ভঙ্গিতে ও কি বিদ্যািদ বেগে চলতে পারে। আমরা “সাহিত্যিক’ ভাবে কথা কই নে ব’লে আমাদের মাখের কথায় বাংলা ভাষার সেই সহজে ভঙ্গিটি রক্ষিত হয়। কিন্তু লিখতে বসলেই আমরা তার এমন-একটা কৃত্রিম গড়ন দেবার চোেটা পাই, যাতে তার চলৎশক্তি রহিত হয়ে আসে। ভাষাবি এই আড়স্ট ভাবটাই সাধিতার একটা লক্ষণ বলে পরিচিত। তাই বাংলা সাহিত্যে সাধারণ লেখকের গ’ল গদাই-লশাকরি ভাবে চলে, এবং কুলেখকদের হাতের লেখা একটা জড়পদার্থের সন্তাপমাত্র হয়ে থাকে। এই জড়তার বন্ধন থেকে মন্ত হবাব একমাত্র উপায় হচ্ছে, লেখাতেও মৌখিক ভাষার সহজ ভঙ্গিটি রক্ষা করা। কিন্তু যেই আমরা সে কাজ করি আমনি আমাদের বিরুদ্ধে সাধভাষার কলের জল ঘোলা করে দেবার এবং বাংলা সাহিত্যের পাড়া-ভাতে ‘প্রাদেশিক শব্দে'র ছাই ঢেলে দেবার অভিযোগ উপস্থিত হয়। ভাষামাত্রেরই তার আকৃতি ও গঠনের মতো একটা বিশিস্ট প্রকৃতি আছে, এবং প্রকৃতিস্থ থাকার উপরই তার শক্তি এবং সৌন্দৰ্য নিভাির করে। বঙ্গ ভাষার সেই প্রকৃতির বিশেষ জ্ঞানের অভাব্যবশতই আমরা সে ভাষাকে সংস্কৃত করতে গিয়ে বিকৃত করে ফেলি। তা ছাড়া প্রতি ভাষারই একটি স্বতন্ত্র সরে আছে। এমন অনেক সংস্কৃত শব্দ আছে যা বাংলার সরে মেলে না এবং শোনাবামাত্র কানে খট করে লাগে। যাব সরিজ্ঞান নেই তাকে কোনোরাপ তকবিতক দবারা সে জ্ঞান দেওয়া যায় না। “সাহিত্যিক।’ এই শব্দটি ব্যাকরণসিদ্ধ হলেও যে বাঙালির কানে নিতান্ত বেসরো লাগে, এ কথা যার ভাষার জ্ঞান আছে তাকে বোঝানো অনাবশ্যক, আর যার নেই তাকে বোঝানো অসম্পভব। এই বিকৃত এবং অশ্রাব্য “সাহিত্যিক ভাষার বন্ধন থেকে সাহিত্যকে মন্ত করবার প্রস্তাব করলেই যে সকলে মারমাখো হয়ে ওঠেন, তার একমাত্র কারণ এই যে, উন্ত ভাষা ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙালির সর্বাভাবিক ঢিলেম, মানসিক আলস্য এবং পল্লবগ্রাহিতার অনকােল। মন্তির নাম শোনবামাত্রই আমাদের অভ্যস্ত মনোভাবসকল বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। রাজা রামমোহন রায়ের মতে সাধসমাজের লোকেরা যে ভাষা কহেন এবং শানেন’ সেই ভাষাই সাধভাষা। কিন্তু আজকালকার মতে, যে ভাষা