পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গভাষা বনাম বাবা-বাংলা ওরফে সাধাভাষা So9Id পরিমাণে মত্ত করে এ যাগের মৌখিক ভাষার অন্যরূপে করে নিয়ে আসবার পক্ষপাতী। এবং আমার মতে, খাস-কলকাত্তাই নয়, কিন্তু কলিকাতার ভদ্রসমাজের মাখের ভাষা অনসরণ করেই আমাদের চলা কতব্য। জীবনের ধামই হচ্ছে পরিবতন। জীবন্ত ভাষা চিরকাল এক রূপ ধারণ করে থাকে না, কালের সঙ্গে সঙ্গেই তার রপোন্তর হয়। চসারের ভাষায় আজকাল কোনো ইংরেজ লেখক কবিতা লেখেন না, শেকসপিয়ারের ভাষাতেও লেখেন না। কালক্ৰমে মখে মাখে ভাষার যে পরিবতন ঘটেছে তাই গ্রাহ্য করে নিয়ে তাঁরা সাহিত্যরচনা করেন। আমাদেরও তাই করা উচিত। ভাষার গঠনের বদলের জন্য বহন যােগ আবশ্যক, শব্দের আকৃতি ও রােপ নিত্যই বদলে আসছে। ভাষা একবার লিপিবদ্ধ হলে অক্ষরে শব্দের রােপ অনেকটা ধরে রাখে, তার পরিবর্তনের পথে বাধা দেয়, কিন্তু একেবারে বন্ধ করতে পারে না। আর, যে-সকল শব্দ লেখায় ব্যবহত হয় না, তাদের চেহারা মখে মনখে চটপট বদলে যায়। আজকাল আমরা নিত্য যে ভাষা ব্যবহার করি, তা আমাদের প্রাচীন সাহিত্যের ভাষা হতে অনেক পথক। প্রথমত, সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দ আজকাল বাংলায় ব্যবহৃত হয় যা পাবে হত না; দ্বিতীয়ত, অনেক শব্দ যা পাবে ব্যবহার হত তা এখন ব্যবহার হয় না; তৃতীয়ত, যে কথার পাবে চলন ছিল তার আকার এবং বিভক্তি অনেকটা নতুন রােপ ধারণ করেছে। আমার মতে সাহিত্যের ভাষাকে সজীব করতে হলে তাকে এখনকার ভদ্রসমাজের প্রচলিত ভাষার অন্যরাপ করা চাই। তার জন্য অনেক কথা যা পাবে প্রচলিত ছিল, কিন্তু সংস্কৃতের অত্যাচারে যা আজকাল আমাদের সাহিত্যের বহিভূত হয়ে পড়েছে, তা আধার লেখায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তার পর মাখে মাখে প্রচলিত শব্দের আকারের এবং বিভৗস্তুর যে পরিবতন ঘটেছে, সেটা মেনে নিয়ে তাদের বতর্তমান আকারে ব্যবহার করাই শ্রেয়। ‘আসিতেছি’ শব্দের এই রােপটি সাধ, এবং ‘আসছি’ এই রােপটি অসাধ, বলে গণ্য। শেষোক্ত আকারে এই কথাটি ব্যবহার করতে গেলেই আমাদের বিরদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয় যে, আমরা বঙ্গ সাহিত্যের মহাভারত অশািন্ধ কনে দিলাম। একটা মনোযোগ করে দেখলেই দেখা যায় যে ‘আসছি’ ‘আসিতেছিাঁর অপেক্ষা শ্রেশঠ আকার। আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে যে ‘আসিতেছি’র ব্যবহার আছে তার কারণ, তখন লোকের মাখে কথাটি ঐ আকারেই ব্যবহৃত হত। আজও উত্তর এবং পর্ববঙ্গে ম্যুখে মখে ঐ আকারই প্রচলিত। সমগ্র বাংলাদেশ ভাষা সম্পবন্ধে পবে যেখানে ছিল, উত্তর এবং পর্ববঙ্গ আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ অনেক এগিয়ে এসেছে। ‘আসিতেছি’তে “আসিতে' এবং ‘আছি’ এই দটি কিযা গা-ঘেষা ঘোষি করে রয়েছে, দ্য যে মিলে একটি ব্রুিয়া হয়ে ওঠে নি। কিন্তু শব্দটির আসছি' এই আকাবে ‘আছি' এই ক্রিযাটি লািপত হয়ে ‘ছি’ এই বিভক্তিতে পরিণত হযেছে। সতরাং ‘আসছিাঁর অপেক্ষা আসিতেছি' কোনো হিসেবেই অধিক শদ্ধ নয়, শােধ, বেশি সেকেলে, বেশি ভারী এবং বেশি আচল আকার। সতরাং ‘আসিতেছি পবিহার কাবে ‘আসছি' ব্যাবহার করতে আমরা যে পিছপাও হই নে, তার কারণ এ কায করাতে ভাষাজগতে পিছনো হয় না, বরং সবাতোভাবে এগনোই হয়। ঐ একই কারণে ‘করিয়া যে “ক’রে অপেক্ষা বেশি শব্দ্ধ, তা নয়, শািন্ধ বেশি।