পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষ সভ্য কি না। সেকালে ভারতবর্ষ ছিল মীমাংসার যােগ, একালে হয়েছে সমস্যার। এ কথা যে সত্য, এতগলো কমিশনই তার প্রমাণ। এই আজকের দিনে পাঁচ-পাঁচটা কমিশনের প্রসাদে পাঁচ-পাঁচটা সমস্যা রাজ-দরবারে টাঙানো রয়েছে; যথা : ১ চাকরির সমস্যা, ২ সাবরাজের সমস্যা, ৩ অরাজকতার সমস্যা, ৪ শিলেপির সমস্যা, ৫ শিক্ষার সমস্যা; তার উপর আবার এসে জটেছে বিয়ের সমস্যা। এর পর জন্ম মাতৃত্যু বাদে দনিয়ার আর কোন সমস্যা বাকি রইল ? ও-দটির যে কোনো সমস্যা নেই, তার কারণ ও-দটিই হচ্ছে রহস্য। তবে এ দেশে জন্মটা বড়ো রহস্য না মাতুটা বড়ো, এ বিষয়ে একটা তক অবশ্য উঠতে পারে। কিন্তু ওঠে না। এইজন্য যে, তার মীমাংসাও সাপটে। আমাদের পক্ষে ও-দইই সমান। এ যােগ সমস্যার যােগ, বিশেষ করে এই কারণে যে, এ যাগে অধিকারীভেদ নেই। জীবন, তা সে ব্যক্তিগতই হোক আর জাতিগতই হোক, চিরকালই একটা সমস্যা; কিন্তু সেকালে এ সমস্যা নিয়ে মাথা বাকাত দ-চার জন; আর একালে কোনো বিষয়ে একটা সমস্যা উঠলে আমরা সকলে মিলে তার মীমাংসা করতে বাধ্য। যেকালে সকলের সকল বিষয়ে মত দেবার অধিকার আছে, সেকালে কোনো বিষয়েই কারো চুপ করে থাকবার অধিকার নেই। যদি বল, যার নিজের একটা মত গড়বার সামর্থ্য নেই, এক কথায় যার মত ব’লে কোনো পদার্থই নেই, সে সে-পদাৰ্থ দান করে কি করে। তার উত্তর, মনের ঘরে যার শান্য আছে, সে শান্যই দিতে পাবে; শািন্ধ যে দিতে পারে। তাই নয়, দেশের ও দশের মঙ্গলের জন্য তার পক্ষে তা দেওয়া একান্ত কতব্য। একের পিছনে শান্য বসালে তা যে দশগণ বেড়ে যায়, এ কথা কে না। জানে। সতরাং যার হোক একটা মতের পিছনে আমরা যদি ক্ৰমান্বয়ে শান্য বসিয়ে যাই, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে তার দশগণ করে মাল্য বেড়ে যাবে। সত্য কথা বলতে গেলে, রাজনৈতিকপ্রমািখ বিষয়ে অধিকাংশ লোকের পক্ষে কোনোরাপ মত না থাকাটাই শ্ৰেয়ঃ। সকলেরই যদি একটা-না-একটা স্বমত থাকে, তা হলে নানা মতের সন্টি হয়; অপর পক্ষে অধিকাংশ লোক মতশান্য হলে যা সন্টি হয়, তার নাম লোকমত। আর, এ কথা বলা বাহাল্য যে, একালে লোকমতই হচ্ছে একমাত্র কেজো মত, কেননা ও-মতের অভাবে হয় কোনো বিলই পাস হয় না, নয় সকল বিলই পাস হয়। এর কারণও খাঁজে বার করতে হবে না। নানা মত পরস্পরের সঙ্গে কাটাকাটি গিয়ে বাকি থাকে শােধ শান্য, আর শন্যে শন্যে যোগ দিলে দাঁড়ায় গিয়ে বিরাট একে। এই সত্যই যে সারা সত্য, তার প্রমাণ দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক, দরকম অদ্বৈতবাদের মধ্যে সমান পাওয়া যায়।