পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটি পারিবারিক সমিতিতে পঠিত হে সমিতির কুমার ও কুমারী-গণ, তোমাদের সমিতির কর্ণধার ভারতবর্ষের জিয়োগ্রাফির সঙ্গে তোমাদের দ্য কথায় পরিচয় করিয়ে দেবার ভার আমার উপর ন্যস্ত করেছেন। জিয়োগ্রাফি বিজ্ঞানের অন্তভূতি, সাহিত্যের নয়; আর এ কথা সবাই জানে যে, আমি সাহিত্যিক হলেও হতে পারি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক নই। তবে যে আমি এ অনরোধ রক্ষা করবার জন্য উদ্যত হয়েছি, তার কারণ অনধিকারচর্চা করবার কু অভ্যাস ও দঃসাহস দই আমার আছে। কিন্তু প্রথমেই এক মশকিলে পড়েছি। সকল বিজ্ঞানের মতো জিয়োগ্রাফিরও একটা বিশেষ পরিভাষা আছে। সে পরিভাষা মালত ইংরেজি। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় যে পরিভাষা আছে, তা হয় সংস্কৃত নয়। ইংরেজির অন্যবাদ। সে-সব সংস্কৃত কথার অর্থ বৰঝতে হলে তাদের আবার মনে মনে ইংরেজি ভাষায় উলটে অন্যবাদ করে নিতে হয়। একটি উদাহরণ দিই। অন্তরীপ ও cape, এ দটি কথাই বাঙালির কাছে সমান অপরিচিত। এ দায়ের মধ্যে সম্পভবত কেপ শব্দটিই তোমরা স্কুলঘরে বেশি বার শনেছ, অতএব তোমাদের কাছে বেশি পরিচিত। অপর পক্ষে উত্তমাশা অন্তরীপ বললে আমরা ভাবতে বসে যাই, জিনিসটা কি। আর ততক্ষণ চিন্তার দায় থেকে অব্যাহতি পাই নে, যতক্ষণ না কেউ বলে দেয় যে, ও হচ্ছে কেপ অব গড হোপ-এর বাংলা নাম। আর শঙ্গ-অন্তরীপ (কেপা হন)। শনলে তো আমরা অগাধ জলে পড়ি। আর সে জলে পড়লে আর উদ্ধার নেই, কারণ সে ठळ दर्शका आढ् । আমাদের পরিভাষার দশা যখন এরপ মারাত্মক, তখন আমি যতদর সম্পভব পরিভাষা পরিত্যাগ করে আমার কথা ভাষায় বলতে চেন্টা করব। যেখানে অগত্যা পরিভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হব, সেখানে ইংরেজি শব্দই ব্যবহার করব। এ প্রস্তাব শনে আমার হাতে বাংলা ভাষার জাত মারা যাবে ভেবে তোমরা ভীত হোয়ো না। ইংবেজি বিজ্ঞানের পরিভাষাও ইংরেজি নয়, গ্রীক। আর গ্ৰীক সভ্যতার বয়েস আড়াই হাজার বৎসর। সতরাং তার সােপশোঁ আমাদের ভাষার আভিজাত্য একেবারে নম্পট হবে না। ভারতবর্ষের সভ্যতার সঙ্গে গ্রী, সভ্যতার আর-কোনো বিষয়ে মিল না থাকুক, বয়েসে মিল আছে। ভূমন্ডল প্রথমেই আমি তোমাদের কাছে পথিবী নামক গোলকটির কিঞ্চিৎ পরিচয় দেব। এ গোলকটি ক্ষিতি আর অপ-মাটি আর জল- এই দাই ভূতে গড়া! আর এ গোলকের বহিঃপঠের চার ভাগের তিন ভাগ হচ্ছে জল, আর এক ভাগ স্থল।