পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOOR প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ আমরা অবশ্য পথিবী বলতে প্রধানত মাটিই বঝি। তার প্রমাণ আমরা একে ভূমন্ডল বলি। এর কারণ আমরা ভূচর জীব, অর্থাৎ মাটির উপর বাস করি। জলচর জীবদের যদি শােধ জল-পিপাসা নয়, সেইসঙ্গে জ্ঞান-পিপাসা থাকত ও সেইসঙ্গে তাদের জ্ঞান তরল ভাষায় ব্যক্ত করবার ক্ষমতা থাকত, তা হলে তারা জিয়োগ্রাফি না রচনা করে রচনা করত। হাইড্রোগ্রাফি। আর তারা কবিতা লিখিত ‘আমার জন্মজলের উপর। আর আমরা যাকে বলি মধর রস, তার নাম তারা দিত লবণ রস। এর থেকেই দেখতে পােচ্ছ যে, আমাদের কলপনা আশা আকাঙক্ষা কতটা মাটিগত, অর্থাৎ আমরা মনে-প্ৰাণে কতটা জিয়োগ্রাফির অধীন। পথিবীর ভাগ এখন শোনো, মাটি কিন্তু একলাপত ভাবে নেই, খন্ড খণড ভাবে আছে। প্রাচীন শাস্ত্রকাররা বলেন যে, মেদিনী সপতদ্বীপ আকারে ব্যক্ত হয়েছে। এই দ্বীপ শব্দটার অর্থ তোমরা সবাই জােন। যার চারি দিকে জল আর মাঝখানে স্থল, তাকেই আমরা বলি দাবীপ। এ হিসাবে আজকের দিনে পথিবীতে সাতটি নয়, অসংখ্য দাবীপ আছে। সমদ্রের মধ্যে থেকে অসংখ্য ছোটোেবড়ো দ্বীপ মাথা তুলে রয়েছে। সতরাং এ স্থলে সপতদ্বীপ অর্থে সাতটি মহাদ্বীপ বৰ্ব্বতে হবে। এই মহাদ্বীপকে আমরা একালে মহাদেশ বলি। আজকের দিনে আমরা পথিবীকে চারটি মহাদেশে ভাগ করি, যথা : ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা ও আমেরিকা; অস্ট্রেলিয়াকে আমরা আজও মহাদ্বীপ বলেই জানি, মহাদেশ বলে মানি নে। মহাদেশ বলতে যদি মহাদ্বীপ বোঝায়, তা হলে পথিবীতে চারটি নয় তিনটি মাত্র মহাদ্বীপ আছে : প্রথম ইউরেশিয়া, দ্বিতীয় আফ্রিকা, তৃতীয় আমেরিকা। গেলাবের প্রতি একবার দণ্টিপাত করলেই দেখতে পাবে যে, গোটা ইউরোপ ও গোটা এশিয়ার ভিতর কোথাও জলের ব্যবধান নেই। এ দই দেশের জমি একলাপত । আর এই আদি মহাদেশটি হচেছ একটি প্রকান্ড দাবীপ। এর উত্তরে আকাঁটক সী, দক্ষিণে ইন্ডিয়ান ওশন, পশ্চিমে অ্যাটলান্টিক ও পাবে প্যাসিফিক ওশন ; আর আফ্রিকার উত্তরে ও পশ্চিমে অ্যাটলান্টিক এবং দক্ষিণে ও পাবে ইন্ডিয়ান ওশন। আর আমেরিকার পশ্চিমে প্যাসিফিক, পাবে অ্যাটলান্টিক, উত্তরে উত্তর-আকাটিক ও দক্ষিণে দক্ষিণ-আকাটিক সাগর। ইউরেশিয়ার সঙ্গে অপর দটি মহাদেশের গড়নেরও একটা সািপলট প্রভেদ আছে। ইউরেশিয়ার বিস্তার পর্ব হতে পশ্চিমে, অপর দটির উত্তর হতে দক্ষিণে। অর্থাৎ ইউরেশিয়া লক্ষবার চাইতে চওড়ায় বেশি ; আফ্রিকা ও আমেরিকা চওড়ার চাইতে লম্পবায় বেশি। এই আকারভেদ এক দেশের সঙ্গে অপর দেশের অনেক প্রভেদ ঘটিয়েছে। তোমরা সবাই জান যে ইউরেশিয়া ও আফ্রিকাকে আমরা প্রাচীন পথিবী বলি ও আমেরিকাকে নবীন। এর প্রধান কারণ প্রাচীন পথিবীর লোক পাঁচশো বৎসর পবোঁ আমেরিকার অস্তিত্বের কথা জানত না। অতএব, এ নাম শােধ লৌকিক, বৈজ্ঞানিক হিসেবে ঠিক নয়। তা ছাড়া, অনেক বিষয়ে এই নতুন পথিবী প্রাচীন