পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OS 8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ এ দই দেশের জলবায়ও বিভিন্ন। মেঘ আসে সমদ্র থেকে, আর পবনদেরই মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে আসেন। সতরাং কোন দেশে। কত বন্টি হয় তা নিভার কােল কোন দেশে কোন দিক থেকে কি বাতাস বয়, তার উপর। তোমাদের পর্বে বলেছি যে, সিন্ধাদেশ হচ্ছে অনাবান্টির ও আসাম অতিবন্টির দেশ। এর মধ্যবতী দেশ অলপবান্টির দেশ। অপর পক্ষে দক্ষিণাপথের পশ্চিম উপকােল অতিবন্টির দেশ, ও তার পর্ব অংশই অনাবলিটির দেশ। যে বায়কে আমরা মনসন নামে আখ্যাত করি, তার চলবার পথ হচ্ছে ভারতবর্ষের দক্ষিণপশ্চিম কোণ থেকে উত্তরপােব কোণে। এ বাতাস মালাবার দেশকে জলে ভাসিয়ে দেয়। আবার বাংলায় ঢোকার পর এর গতি হয় দক্ষিণপােব থেকে উত্তরপশ্চিমে। এই বাতাস বাংলা ও আসামের গায়ে প্রচুর জল ঢেলে দিয়ে তার পর উত্তরাপথের অন্তরে গিয়ে প্রবেশ করে। গ্রীষ্মমঋতুর অবসানেই এ দেশে বর্ষাঋতু দেখা দেয়। মনসন। কিন্তু পঞ্চনদ পর্যন্ত ঠেলে উঠতে পারে না। এজন্য বাংলায় যখন বন্টি হয়, পাঞ্জাব তখন শাখনো। পাঞ্জাবে শীতকালই বর্ষাকাল। ভারতবর্ষের লোক শতকরা নব্বই জন হচ্ছে কৃষিজীবী। এই কারণে ভারতবষী নাগরিক দেশ নয়, গ্রাম্য দেশ। এ দেশে সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার গ্রাম আছে, আর পাঁচাত্তরটিও নগর নেই। নগরেও একরকম সভ্যতার সন্টি হয়, যেমন হয়েছিল পর্যাকালে গ্রীসের আথেন্স ও ইতালির রোম নগরীতে। আর সেই সভ্যতাই কতক অংশে বর্তমান ইউরোপের মনের উপর প্রভুত্ব করছে। এই শহরে মনোভাব থেকে নিম্প্রকৃতি না পেলে মানষের মন ভারতবর্ষ ও চীনদেশের সভ্যতার প্রতি অনকােল হয় না। এই কারণেই ইউরোপের সাধারণ লোক ও বিতর্তমান ভারতবর্ষের অসাধারণ লোকে--- অর্থাৎ যারা শিক্ষা-দীক্ষার প্রভাবে বিলেতের সাধারণ লোকের শামিল হয়ে গিয়েছে, তারা- ভারতবর্ষের সভ্যতাকে অসভ্যতা মনে করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, ইউরোপীয় সভ্যতা জন্মলাভ করেছে। শহরে ও সেই-- খানেই লালিত-পালিত হয়েছে; অপর পক্ষে ভারতবর্ষের সভ্যতা জন্মগ্রহণ করেছে বনে, অর্থাৎ ঋষির আশ্রমে, ও সেইখানেই লালিত-পালিত হয়েছে। এ দেশ যদি ঋষিক্ষেত্র হয়, তার কারণ এ দেশ মলে কৃষিক্ষেত্র। বন গ্রামেরই অপর পাঠা। আশ্রম মাটির নয়, মনেরই কৃষিক্ষেত্র। আজকাল অনেক ইংরেজ শিক্ষিত সদাশয় লোক ভিলেজ অরগ্যানিজেশন করবার জন্য অতিশয় ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু মানষে কৃষিকমের জন্য যােগ যােগ ধরে যে অরগ্যানিজেশন করেছে, তারই নাম কি ভিলেজ নয়? ভিলেজ জিনিসটে শব্ধ। অরগ্যানাইজড নয়, কালবশে প্রতি গ্রাম এক-একটি অরগ্যানিজম হয়ে উঠেছে। অরগ্যানিজমকে অরগ্যানাইজ করবার প্রবত্তিটি যেমন উচচ, তেমনি নিরর্থক। অরগ্যানিজম ও ব্যাধিগ্রস্ত হয়; যদি আমাদের দেশের গ্রামসমােহ তাই হয়ে থাকে, তা হলে তাদের ব্যাধিমন্ত করবার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসার নাম অরগ্যানিজেশন নয়; অরগ্যানাইজ মানষে করে শােধ কলকারখানা। যে ভূভাগকে ভগবান চাষের দেশ করে গড়েছেন, তাকে আমরা পাঁচজনে কলকারখানার দেশ, তৈরি করতে পারব না, তা চাষার মাখের গ্রাস কেড়ে টাটা কোম্পানির লোহার কলের পেট