পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२२ প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ আর সোনার খনিতে মন্ডিত। কোনো কোনো ইউরোপীয় পন্ডিত বলেন, এ দেশ জাভা নয়, সমাত্রা। কেননা সোনার খনি জাভায় নেই ও কোনো কালে ছিল না।-- ছিল ও আছে শািন্ধ সমাত্রায়। অপর আর-এক দল বলেন যে, যবন্দ্বীপ জাভাই, সন্মাত্রা নয়। কিন্তু আসল কথা এই যে, সেকালে হিন্দদের কাছে জাভা ও সমাত্রা উভয় অস্বীপই ব্যবদ্ধবীপ বলে পরিচিত ছিল। সমাত্রা পরে সর্বণ দ্বীপ সাবর্ণদ্বীপ প্রভাতি নাম ধারণ করে। সমাত্রা নাম পরোনো নয়। সার্বণ দ্বীপে সমদ্র বলে একটি নগর ছিল। সেই সমদ্রই আরবি জবানে রপোন্তরিত হয়ে সমাত্রা হয়েছে, এবং এই নতুন নামেই ও-দ্বিীপ ইউরোপীয়দের কাছে পরিচিত, আর একালের জিয়োগ্রাফিতে প্ৰসিদ্ধ। ইউরোপীয় পন্ডিতরা বলেন যে, প্রাচীন হিন্দদের ভূগোলের জ্ঞানের দৌড় ঐ ববন্ধবীপ পর্যন্ত ছিল। তার পাবে যে আর-কোনো দেশ আছে, তা তাঁরা জানতেন না। তাই তাঁরা যবন্দ্বীপ অতিক্রম করে যে শিশির-পবতের উল্লেখ করেছেন, সে পবীত তাঁদের ষোলো-আনা মনগড়া। আমি প্রথমত ইউরোপীয় নই, দ্বিতীয়ত পন্ডিত নই; সতরাং তাঁদের কথা আমি নতমস্তকে মেনে নিতে বাধ্য নই। যবস্বীপ অতিক্রম করে যে দাবীপটি পাওয়া যায়, তার নাম বলিদাবীপ; এবং তার অন্তরে যে পাবত আছে, সে পবিতকে শিশির বলা ছেরেফ কবিকলপনা নয়। কেননা যার এক-একটি শওগ দশ হাজার ফটের চেয়েও উচু, সে পর্বতকে কিছতেই গ্রীষ্মমপর্বত বলা যায় না, যদি কিছ বলতে হয় তো শিশির বলাই সংগত। শনতে পাই উক্ত দ্বীপপাঞ্জ চিরবসন্তের দেশ। সতরাং সে দেশের পাহাড়ে শীত হবারই কথা। আর সে পর্বত দেবদানব-সেবিত বলবার অর্থ সেখানে মানষের বসতি নেই। হনমানকে সীতার খোঁজে আরো অনেক স্থানে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে-সব দেশ যে রূপকথার দেশ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে দেশে মানষের কান হাতির কানের মতো বড়ো, ও যে দেশে মানষের কান উটের কানের মতো ছোটো, আর যে দেশে মানষের পা দটাে নয়, একটা মাত্র, অথচ সেই এক পায়ে তারা খব ফতি করে চলে, সে-সব দেশেও হনমানকে ভ্ৰাম্যমাণ হবার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ-সব দেশের কোনো নাম বলা হয় নি। এর থেকেই সাপটি প্রমাণ হয় যে, যে-সব দেশের নাম হিন্দরা জানত না, সেই-সব দেশ সম্পবন্ধে তাদের কল্পনা খেলত। যে দেশের নাম তারা জানত, সে দেশের রপও তারা চিনত। সে যাই হোক, বলিদ্বীপেরও নাম যখন সংস্কৃত, তখন সে নামকরণ যে হিন্দরাই করেছিলেন, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। আর খস্টেজন্মের পাবেও যে হিন্দুরা বলিদ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন, তারও কিছকিঞ্চিৎ প্রমাণ আছে। এই স্বীপপঞ্জে উপনিবেশ-পথাপন হিন্দজাতির ইতিহাসের একটি উত্তজবল অধ্যায়। সে ইতিহাস আমি আজ তোমাদের শোনাব না; কারণ সে মস্ত লম্বা ইতিহাস। হিন্দজাতির মহা গৌরবের কথা এই যে, হিন্দরা এই দাবীপবাসী অসভ্য জাতদের সভ্য করে তুলেছিলেন। এ দেশের লোক পাবে যে কিরকম ঘোর অসভ্য ও ভীষণপ্রকৃতির লোক ছিল, তা রামায়ণে দাবীপবাসীদের বর্ণনা থেকেই অনমান করা যায়। তারা ছিল ‘আমমীনাশনঃ” অর্থাৎ তারা কাঁচা মাছ খেত।