পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনা-হিন্দস্থান e). So তাতে কিছ যায় আসে না; কেননা সদসভ্য জাপানিরা আজও তাই খায়। বালিমীকি শানেছিলেন যে, তারা ‘অন্তর্জলচরা ঘোরা নরব্যাঘাঃ”। নরশাদািল অবশ্য আমরা বীরপরিষদেরই বলি, কিন্তু নরব্যাক্স বলতে বীরপােরষি বোঝায় না, বোঝায়। সেই জাতীয় পরিষদের, যারা ‘অক্ষয়া বলবন্ত পরিষা পরিষাব্দকা”— ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যানিবলস। এই হেমাঙ্গ কিরাতের দল ছিল সব ক্যালিবনের দাদা ক্যানিবল। শ্ৰীবিজয়রাজ্যের অর্থাৎ সমাত্রার ইতিহাস-লেখক জনৈক ফরাসি পন্ডিত বলেছেন R আমরা পরোনো দলিলপত্র থেকে প্রমাণ পেয়েছি যে, ভারত-মহাসাগরের দাবীপপঞ্জ পরোকালে এক নব সভ্যতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। যেমন কাম্পেবাজের (ক্যাম্বোডিয়া) ও চম্পার (আনাম-কোচিনচায়না) তেমনি এ দেশেরও Alma Mater ভারতবর্ষ বহনকাল পবো তার দেবতা, তার শিলপকলা, তার ভাষা, তার সাহিত্য, সংক্ষেপে তার সভ্যতার সকল মহামল্য উপকরণ এই দাবীপবাসীদের সানন্দে দান করেছিল, এবং সহস্ৰ বৎসরের অধিককাল ধরে এই দাবীপবাসীরা সমগ্র হিন্দ-সভ্যতা ভক্তিভরে শিক্ষা ও আয়ত্ত করে তাদের হিন্দগারদের গৌরবান্বিত করেছিল। একটি সভ্য জাতি একটি অসভ্য জাতিকে নিজের ধম আট ও সাহিত্যের চেয়ে বড়ো আর কোন মহামল্য বস্তু দান করতে পারে। প্ৰসিদ্ধ চীন-পরিব্রাজক ই-চিং খসেন্টীয় সপ্ততম শতাব্দীতে ভারতবর্ষ থেকে সবদেশে ফেরবার পথে সীমাত্রার অন্তর্গত শ্ৰীবিজয়রাজ্যে কিছকাল বাস করেন। তিনি তাঁর ভ্ৰমণবত্তান্তে লিখে গিয়েছেন যে শ্ৰীবিজয়ের বৌদ্ধ-পশিডতরা ভারতবর্ষের মধ্যদেশেম পন্ডিতদের মত সমগ্র সংস্কৃত শাস্ত্র চৰ্চা করেন, ও তাঁদের ক্লিয়া-কলাপ আচার-বিচার মাধ্যদেশের ক্রিয়া-কলাপ আচার-বিচারের সম্পৰ্ণে অনারাপ। সতরাং ভবিষ্যতে চীন-পরিব্রাজকরা যেন প্রথমে শ্ৰীবিজয়ে এসে সংস্কৃত শিক্ষা করেন। পরে ভারতবষে যান। আমরা যেমন আগে গোলদিঘির পন্ডিতদের কাছে ইংরেজি শিক্ষা করে পয়ে বিলেত যাই। ই-চিংয়ের পরামর্শ অনসারে তাঁর পরবতী বহা চীনদেশীয় পরিব্রাজক সংস্কৃত সাহিত্য শিক্ষা করবার জন্য ব্যবদ্বীপ ও শ্ৰীবিজয়ে গিয়েছিলেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি। যবিদ্বীপে প্রথমত হিন্দধম প্রচলিত ছিল, পরে সে দেশে বৌদ্ধধম প্রচারিত হয়। কিন্তু যবন্দ্বীপে এ দই ধৰ্ম পথক ছিল না, দিয়ে মিলে একই ধম হয়। বদ্ধ সে দেশে শিববদ্ধ নামেই পরিচিত। এ দেশে বদ্ধদেব বিষ্ণর অবতার হিসেবেই গণ্য; কিন্তু সে দেশে শিবে ও বন্ধে সমান হয়ে গিয়েছিল। সেকালে হিন্দরা যে অপর দেশের লোককে সভ্য করেছিল, এ কথা বিশবাস করা দরে থাক, এ যাগের আমরা তা কলপনাও করতে পারি নে; কারণ এখন অপর দেশের লোক আমাদের সভ্য করছে, আর তাদের সভ্যতা আমরা সকল তন মন ধন দিয়ে মখস্থ করতে এতই ব্যস্ত যে, ভারতবর্ষ যে এককালে সভ্য ছিল সে কথা আমাদের মনে স্থান পায় না, পায় শােধ মাখে।