পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তেল নতুন লকড়ি O OG আবশ্যক নেই; শািন্ধ এই জানি যে, আমাদের জাতির মালশক্তি উদবোধিত হয়েছে। সেই শান্তি আমাদের সকলেরই প্ৰাণে জাগরকে হয়ে উঠেছে, যে শান্তির কার্য হচ্ছে আমাদের সমগ্ৰ জাতির অপরােপ শ্ৰী এবং উন্নতি সাধন করা। জড়পদার্থ নিয়ে একটা কিছ গড়তে হলে আগে হতেই একটা পাল্যান এবং এসটিমেট করতে হয়; কিন্তু প্ৰাণ নিজের আকৃতি নিজে গড়ে নেয়, বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপেও ক্রমে সাপটি হয়ে আসে। প্রকৃতি যে ফল ফোটাবে, মানষে তার সাহায্য করতে পারে কিংবা বাধা দিতে পারে, কিন্তু তাতে সবকপোলকলিপিত বৰ্ণ গন্ধ আকার এনে দিতে পারে না। কাগজের ফলে রচনায় আমাদের যে সবাধীনতা আছে, গাছের ফল ভালো করে ফোটানোতে সে সবাধীনতা নেই। আমাদের সবদেশী সমাজের অক্ষয়-বটে। নতুন পাতা দেখা দিয়েছে, আমাদের কতব্য এখন তার গোড়ায় প্রচুর সার এবং জল জোগানো, আর চার পাশের জঞ্জাল ও জঙ্গল দরি করা। আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক-সকল স্বদেশী সমাজ অবলম্ববন করেও আমাদের সবাতন্ত্র্য রক্ষা করব, কিন্তু সে তার শাখাপ্রশাখা হয়ে, পরগাছা হয়ে নয়। সতরাং আমরা সবদেশে যাতে বিদেশী না হই, সে বিষয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। আমাদের তন মন ধন দেশের পায়ে বিকতে হবে, বিদেশের পায়ে নয়। আমাদের এই ধারণাটকু জন্মানো উচিত যে, আমাদের কেউ নিজের শক্তি বিক্ষিপ্ত করে ফেলবার অধিকারী নন; সকলের শান্তি একত্র করে, সংহত করে, সবদেশের সবজাতির উন্নতির কাযে প্রয়োগ করতে হবে। অলপ হোক, বিস্তর হোক, আমাদের প্রত্যেকের আত্মশক্তি যাতে ব্যৰ্থ না হয়, যাতে তা সামাজিক গতির সহায়ভূত হয়, তার জন্য প্রথমত দিকনির্ণয় করা দরকার। তার পর, কোথায় কি উপায়ে নিজশক্তি প্রয়োগ করতে পারি, তার হিসাব জানতে হবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমার বক্তব্য দেখতে পাচিছ ক্ৰমে ফলাও এবং গরতের হয়ে আসছে। এই স্থানেই সতরাং আমাকে মনের রাশ টেনে ধরতে হবে। এ প্রবন্ধে আমার কতকগলো সাদাসিধে ছোটোখাটো দৈনিক আচার-ব্যবহারের আলোচনা করবার অভিপ্রায় আছে। কিন্তু হঠাৎ দেখছি ধান ভানতে শিবের গীত শহর করে দিয়েছি। এখন ভূমিকা ছেড়ে জমিতে নামাই আমার পক্ষে কতব্য। আরএকটি কথা বলেই আমি প্রকৃত প্রস্তাব আরম্ভ করব। সে কথাটি হচ্ছে এই, ভারতবর্ষের লক্ষেত সভ্যতা উদ্ধার করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়; আজকের দিনে নিজের দেশে আপনার ভিতর যে নতুন সভ্যতার বীজের সন্ধান পেয়েছি, তাকেই পত্র-পল্পফল-মন্ডিত মহাবক্ষে পরিণত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সাব-দেশের জ্ঞান লাভ করতে গিয়ে সাব-কালের জ্ঞান যেন না হারাই। আমাদের নাতন সভ্যতা যে রােপই ধারণ করাক-না কেন, মাটির গণে তাকে স্বদেশী হতেই হবে। জীবনীশক্তির সাফতি পরিবর্তনের ভিতর দিয়েই হয়। বীজ থেকে ব্যক্ষ একটা ধারাবাহিক পরিবর্তনের সমষ্টি মাত্র। আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজ, ভুত সমাজও হবে না, অদ্ভূত সমাজও হবে না। ইংরেজিয়ানার মোহে আমরা অদ্ভুতত্বের চর্চা করছিলাম, কিন্তু ভূতে না পেলে যে অদ্ভুতত্ব বজ’ন করা যায় না, এমন নয়। আমি বিশ্ববাস করি যে, আমাদের জাতির ভিতর প্রাণ আছে। বৰ্তমান অশান্তি শােধ নতুন জীবনের চাঞ্চল্য, মাতুর অব্যবহিতপবে বিকারের ছটফটানি নয়। যে সমাজে প্ৰাণ আছে,