পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তরজমা OG G সকলপ্রকার শীলই ঐ ইভলিউশন আশ্রয় করে রয়েছে। সতরাং ইভলিউশনের যদি আমরা ভুল অৰ্থ বঝি, তা হলে আমাদের সকল কাৰ্যই যে আরম্ভে পর্যবসিত হবে সে তো ধরা কথা। বাংলায় আমরা ইভলিউশন ‘ক্রমবিকাশবাদ” “ক্রিমোন্নতিবাদ” ইত্যাদি শব্দে তরজমা করে থাকি। ঐরােপ তরজমার ফলে আমাদের মনে এই ধারণা জন্মে গেছে যে, মাসিক পত্রের গলেপর মতো জগৎ-পদার্থটি ক্রমশঃপ্রকাশ্য। সন্টির বইখানি আদ্যোপান্ত লেখা হয়ে গেছে, শধ প্রকৃতির ছাপাখানা থেকে অলপ অলপ করে বেরোচ্ছে, এবং যে অংশটকু বেরিয়েছে তার থেকেই তার রচনাপ্রণালীর ধরন আমরা জানতে পেরেছি। সে প্রণালী হচ্ছে ক্লমোন্নতি, অর্থাৎ যত দিন যাবে তত সমস্ত জগতের এবং তার অন্তভুত জীবজগতের এবং তার অন্তভুত মানবসমাজের এবং তার অন্তভূতি প্রতি মানবের উন্নতি আনিবায। প্রকৃতির ধৰ্মই হচ্ছে আমাদের উন্নতি সাধন করা। সতরাং আমাদের তার জন্য নিজের কোনো চেন্টার আবশ্যক নেই। আমরা শায়েই থাকি আর ঘামিয়ে থাকি, জাগতিক নিয়মের বলে আমাদের উন্নতি হবেই। এই কারণেই এই ক্ৰমোন্নতিবাদ-আকারে ইভলিউশন আমাদের স্বাভাবিক জড়তা এবং নিশেচন্টতার অনকােল মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া এই “ক্লম’ শব্দটি আমাদের মনের উপর এমনি আধিপত্য স্থাপন করেছে যে, সেটিকে অতিক্রম করা পাপের মধ্যে গণ্য হয়ে পড়েছে। তাই আমরা নানা কাজের উপক্ৰমণিকা করেই সন্তুষ্পট থাকি, কোনো বিষয়েরই উপসংহার করাটা কতব্যের মধ্যে গণ্য করি নে; প্রস্তাবনাতেই আমাদের জীবন-নাটকের অভিনয় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আসলে ইভলিউশন ক্ৰমবিকাশও নয় ক্ৰমোন্নতিও নয়। কোনো পদার্থকে প্রকাশ করবার শক্তি জড়প্রকৃতির নেই, এবং তার প্রধান কাজই হচ্ছে সকল উন্নতির পথে বাধা দেওয়া। ইভলিউশন জড়াজগতের নিয়ম নয়, জীবজগতের ধ্যম। ইভলিউশনের মধ্যে শােধ। ইচ্ছাশক্তিরই বিকাশ পরিস্ফাট। ইভলিউশন অর্থে দৈব নয়, পােরষিকার। তাই ইভলিউশনের জ্ঞান মানষেকে অলস হতে শিক্ষা দেয় না, সচেন্ট হতে শিক্ষা দেয়। আমরা ভুল তরজমা করে ইভলিউশনকে আমাদের চরিত্র-হীনতার সহায় করে এনেছি। ইউরোপীয় সভ্যতার হয় আমরা তরজমা করতে কৃতকাৰ্য হচ্ছি নে, নয়। ভুল তরজমা করছি, তাই আমাদের সামাজিক জীবনে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় না, বরং অপচয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ আমাদের বিশ্ববাস যে আমরা দ পাতা ইংরেজি পড়ে নব্যৱাহ্মণসম্প্রদায় হয়ে উঠেছি। তাই আমরা নিজেদের শিক্ষার দৌড় কত সে বিষয়ে লক্ষ না করে জনসাধারণকে শিক্ষা দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। এ সত্য আমরা ভুলে যাই যে, ইউরোপীয় সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান থেকে যদি আমরা নতুন প্ৰাণ লাভ করে থাকতুম তা হলে জনসাধারণের মধ্যে আমরা নবপ্রাণের সঞ্চারও করতে পারতুম। আমরা অধ্যয়ন করে যা লাভ করেছি তা অধ্যাপনার দ্বারা শসদ্ধ লোককে দিতে পারতুম। আমরা আমাদের cultureাকে nationalize করতে পারি নি বলেই গাবনামেন্টকে পরামর্শ দিচ্ছি যে আইনের দ্বারা বাধ্য করে জনসাধারণকে শিক্ষা দেওয়া হোক। মান্যবর শ্ৰীযন্ত গোপালকৃষ্ণ গোখলে যে হাজাগটির মািখপাত্র হয়েছেন, তার মলে ইউরোপের নকল ছাড়া আর কোনো