পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOO প্রবন্ধসংগ্ৰহ দ্বিতীয়ত, সাধারণের সংস্কৃত ভাষায় অজ্ঞতা আর-একটি কারণ। সংস্কৃত না জানার দরবন ভাষার লালিত্য হইতে লোকে ধরিয়া নেয় ভাবেরও অবশ্য সৌন্দৰ্য আছেই আছে। তৃতীয়ত, রাধাকৃষ্ণের প্রেম জয়দেবের কাব্যের বিষয় বলিয়া সাধারণের নিকট জয়দেবের কাব্য এত উপাদেয়। এ. সংসারে ফল জ্যোৎসনা মলয়পবন কোকিলের কুহাসম্বর আমাদের সকলেরই ভালো লাগে, চিরদিন লোকের ভালো লাগিয়াছে এবং চিবদিন ভালো লাগিবে। কিন্তু কতকগলি জিনিস আছে যাহার যথার্থ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দয না থাকিলেও অভ্যাস ও সংস্কার -বশত আমাদের ভালো লাগে। যমােনার জল, তামালের বন, বান্দাবন, মাথারা, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি- এ-সকলের মধরতা পাণি মারজনী দক্ষিণপবনের ন্যায় আমাদের নিকট পরাতন হয় না। যিনিই এ-সকলের কথা বলেন, তাঁহার কথাই আমাদের শনিতে ইচ্ছা যায়। আমরা অনেকেই বন্দোবন, যমনার জল এ-সকল কিছই দেখি নাই, বাঁশির স্বরও কখনো শনি নাই— তবে তাহদের কথা এত প্রাণ সপশ করে কেন ? কারণ ঐ এক-একটি কথা হািদয়ে কত সন্দে বা কত মাধব সমতি জাগাইয়া তুলে ! আমরা যমনাব জল দেখি নাই বটে কিন্তু তাহার সম্প্রবন্ধে এত সন্দের কবিতা প৬িয়াছি যে, যমনার সমস্ত সৌন্দৰ্য আমাদের হািদয়ে লিপিত হইয়া গিয়াছে; তাই বাধাকৃষ্ণের প্রণয়সম্পৰ্কীয় সকল বস্তুকেই প্রকৃতির চিরস্থায়ী সন্দের অংশসকলের মধ্যে ভুক্ত কবিয়া ফেলি। সতরাং জযদেব যখন সেই যমনা, সেই বাঁশি, সেই রাধা, সেই কৃষ্ণ ও সেই বান্দাবনেৰ কথা বলেন তখন তাহার পরিবতে' তাঁহা অপেক্ষা শতগণে শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণবকবিরা আমাদের মনে ঐ-সকলের যে সন্দর মতি আংিকত করিয়াছেন তাহারই দিকে আমাদের দটি পড়ে। আমরা আসল কারণ না বিচার করি যা মনে করি, জয়দেবেবী কবিতা পড়িয়াই আমরা মোহিত হইতেছি। তাঁহার পরবতী কবিসকলের গণ আমবা ভুলক্রমে জয়দেবে আরোপ করি। চন্ডীদাসাদি বৈষ্ণবকবিগণ রাধাকৃষ্ণের প্রেম কাবের বিষয় না করিলে জয়দেব আমাদের যতটা ভালো লাগে তােহা অপেক্ষা অনেক কম ভালো লাগিত, অন্তত আমার কাছে। कार्ल ७२७१