পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙালি-পেট্রিয়টিজম 8ՕԳ দাসের দল একাকার হয়ে যেতে পারে, কিন্তু স্বাধীন মানব তার সবধমের চর্চা ক’রে তার স্বাতন্ত্ৰ্য ফাটিয়ে তুলবে। তখন ভারতবর্ষের নানা জাতি একাকার হবার চেষটা করবে না, পরস্পরের ভিতর ঐক্যস্থাপন করবার চেন্টা করবে। আজকের দিনের কনগ্রেসী ঐক্যের সঙ্গে সে ঐক্যের আকাশপাতাল প্রভেদ হবে। বাইরের চাপে মিলিত হওয়া আর প্রীতির প্রভাবে মিলিত হওয়া একবস্তু নয়। এক জেলে পাঁচজন কয়েদির মিলন আর এক সমাজের পাঁচজন স্বাধীন লোকের মিলনের ভিতর যে প্রভেদ আছে, আজকের ভারতের নানা জাতির কনগ্রেসী মিলনের সঙ্গে কালকের সত্বরাজ্যবাসী জাতিদের মিলনের সেই প্ৰভেদ থাকবে। তখন প্রাদেশিক পেট্রিয়টিজমের ভিত্তির উপরেই বাক্যগত নয়, বস্তুগত ভারতবষীয় পেট্রিয়টিজম গড়ে উঠবে। ছেলেবেলায় হিতোপদেশে পড়েছিঅস্তি গোদাবরীতীরে বিশাল-শ্যালমলীতরঃ। তন্ত্র নানাদিগেদশাৎ আগত্য রাত্রেী পক্ষিণো নিবসতি সম। রাত্রিকালে নানা দিগেদশ হতে পাখিরা এসে গোদাবরীতীরে সেই শিমল গাছে জড়ো হত কেন ?— কিছশক্ষণ কচায়ন করে তার পর আরামে নিদ্রা দেবার জন্য। এ বিষয়ে সকল পক্ষীর সবাৰ্থ একই। কাঁচায়ন শব্দের মানে বোধ হয় জান না। পক্ষীর ভাষায় ও-শব্দের অর্থ পক্ষীসভার রাজনৈতিক আলোচনা। আমরাও ভারতবর্ষের এই রাত্রিকালে কনগ্রেসে গিয়ে দিন-তিনেক ধরে কচাযান করে তার পর নিদ্রা দিই, সেও ঐ একই কারণে। এ কাঁচায়ন করা যে সম্পভব হয়, তার কারণ ইংরেজদত্ত শিক্ষার গণে আমাদের সকলের মখেই এক বলি। এ বলি যে শধ আমাদের মখের কথা, মনের কথা নয়, এ অপবাদ। আমি দিচ্ছি নে। আমি শধ এই সত্যটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, কনগ্রেসী পেট্রিয়টিজমের পিছনে যে মন আছে, সে হচ্ছে আমাদের সকল জাতের বিলেতি পথিপড়া মন। সে মন আমাদের সবারই এক। কিন্তু তার নীচে যে মন আছে সে মন প্রতি জাতির নিজস্ব এবং পরস্পর পথক। আর, আমাদের ভবিষ্যৎ সভ্যতা গড়ে উঠবে আমাদের মনের এই গভীর অন্তস্তল হতে। বিদেশী শিক্ষার ফলে এই সত্যটা ভুলে যাবার সম্পভাবনা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে বলে আজকের দিনে ভারতবর্ষের প্রতি জাতিকে বলা আবশ্যক Know thyself, এবং প্রাদেশিক পেট্রিয়টিজমের সার্থকতাই এইখানে। সবজাতীয় সবাথ সাধনের জন্য আমাদের সকলেরই আজ প্রস্তুত হতে হবে। G আর বেশি এগোবার আগে একটা কথার অর্থ পরিস্কার করা দরকার, সে কথাটা হচ্ছে সবাথ। ও-কথাটা উচ্চারণ করবামাত্র আমাদের চোখের সমখে ধনধান্যের সোনার ছবি এসে দাঁড়ায়। এ তো হবারই কথা। আমরা যখন প্রাণী, ও প্রাণের সব প্রধান চেন্টা যখন আত্মরক্ষা করা, তখন অন্ন আমাদের চাইই চাই। আর পলিটিক্সের যত বড়ো বড়ো কথা আছে তার আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক খোলস