পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SO প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ তুল্য দ্বিতীয় সাহিত্য নেই। ভারতবর্ষের অপর কোনো জাতি দ্বিতীয় বঙ্কিমচন্দ্র কিংবা দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথের জন্মদান করতে পারে নি। অতএব এ কথা নিভয়ে বলা যেতে পারে যে, মনোজগতে আমরা বাকি ভারতবর্ষের সঙ্গে একলোকে বাস করি নে। আমাদের অন্তরে জ্ঞানের ক্ষধা আছে, কাব্যরসের পিপাসাও আছে। এর ফলে মনোজগতে আমাদের কাছে বসধৈব কুট বকম, এবং সেই কারণে ইউরোপের সাহিত্যবিজ্ঞানের শিক্ষা আমরা যতটা আত্মসাৎ করেছি, ভারতবর্ষের অপর কোনো জাত তদািনরপে পারে নি। ইউরোপীয় শিক্ষা যে ভারতবর্ষের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মনের অল্পবিস্তর বদল করেছে। এ কথা আমি মানি, কেননা না মেনে উপায় নেই। আমাদের পলিটিকাল মতামত যে ক থেকে ক্ষ পযন্ত আগাগোড়া বিলেত জিনিস, এ তো সবাই জানে। দেশসদ্ধ লোকের পলিটিকাল আত্মা যে ইউরোপের হাতে গড়ে উঠেছে। এ কথা এক পেশাদার ন্যাশনালিসন্ট ছাড়া আর কারো অস্বীকার করবার প্রয়োজন নেই। তবে অপর ভারতবাসীর সঙ্গে আমাদের প্রভেদ এই যে, আমরা ইউরোপের কাছে এক পলিটিক্স ছাড়া আরো কিছ বিদ্যা আদায় করেছি। ইউরোপের কাব্যবিজ্ঞানের প্রভাব আমাদের মনের উপর নিতান্ত কম নয়। ল্যাফকাডিয়ো হান-এর বইয়ে পড়েছি যে শেকসপিয়রের নাটক জাপানিদের মনের কোনোখানে সপশ করে না। অপর পক্ষে শেকসপিয়রের কাব্য আমাদের মনের সকল তারে ঘা দেয়। সে কাব্য আমাদের মম সপশ করে এবং সে সপশোঁ আমাদের অন্তরাত্মা পালকিত হয়ে ওঠে। শােধ কাব্য নয়, ইউরোপের বিজ্ঞানও আমাদের অতি প্রিয় সামগ্রী। এ বিশব আমাদের কাছে শােধ জড়জগৎ নয়, ভাবের জগৎও বটে; ইন্দ্ৰিয়ের দশনের সপশনে, মনের ধ্যানধারণার বস্তু। আমরা জানি রস খালি কথায় নেই, বিশেবেও আছে; রােপ খালি আর্টে নেই, প্রকৃতিতেও আছে। এ বিশেবর অসীমতা ও অসীম বৈচিত্ৰ্য, তার অন্তনিহিত শক্তির ছন্দোবদ্ধ লীলা আমাদের মনকে মগধ করে। এই বিশব নামক মহাকাব্যের রসাস্বাদ করবার কৌতহল আমাদের অনেকেরই মনে আছে। তাই-না বাঙালি যােবক আইনস্টাইনের নবাবিস্কৃত আলোকতত্ত্বের পরিচয় নিতে এত ব্যাকুল, যদিচ তারা সবাই জানে এই নবাবিস্কৃত তত্ত্ব কমে ভাঙিয়ে নেবার আশা সম্পভাবনা নেই। আমাদের জাতীয় মন জ্ঞানমাগের পথিক বলেই বাংলায় জগদীশ বস, প্ৰফল্লি রায়ের আবিৰ্ভাব হয়েছে। মনোজগতের বস্তুর প্রতি আমাদের এই আন্তরিক অন্যরাগ আছে বলেই বিজ্ঞানের মন্ত্রভাগ আয়ত্ত করবার দিকে বাঙালির এতটা ঝোঁক । এ-সব কথা শনে অনেকে হয়তো বলবেন যে, বাঙালির জ্ঞান জ্ঞানমাত্রেই থেকে যায়, তা কোনো কাজে লাগে না। বিজ্ঞানের যন্ত্রভাগ যে বাঙালি ততটা করায়ত্ত করতে পারে নি, এ কথা সত্য। আমার বিশ্ববাস, এ অক্ষমতার জন্য যত-না দায়ী আমাদের প্রকৃতি, তার চাইতে ঢের বেশি দায়ী আমাদের অবস্থা। কলকারখানা গড়বার শক্তির অভাব সম্পভবত বাঙালির নেই, অভাব আছে শািন্ধ সহযোগের। সে যাই হোক, যা সত্য ও যা সন্দর তার প্রতি বাঙালি মনের এই সহজ আনকমুল্যের প্রশ্রয় দিয়েই তার জাতীয়-জীবন সার্থক করে তোলা যেতে পারে। যেমন ব্যক্তি