পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মলাটি-সমালোচনা “সাহিত্য-সম্পাদকমহাশয় সমীপেষ ‘বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি”-জিনিসটা এ দেশে একটা মস্ত ঠাট্টার সামগ্ৰী। কিন্তু বারো পাত বইয়ের তেরো পাত সমালোচনা দেখে কারোই হাসি পায় না। অথচ বীজ পরিমাণে এক হাত কমই হোক কি এক হাত বেশিই হোক, তার থেকে নতুন ফল জন্মায়; কিন্তু ঐরােপ সমালোচনায় সাহিত্যের কিংবা সমাজের কি ফললাভ হয়, বলা কঠিন। সেকালে যখন সত্ৰ-আকারে মল গ্রন্থ রচনা করবার পদ্ধতি প্রচল্লিত ছিল তখন ভাষ্যো-টীকায়-কারিকায় তার বিস্তৃত ব্যাখ্যার আবশ্যকতা ছিল। কিন্তু একালে যখন, যে কথা দ্য কথায় বলা যায়। তাই দশো কথায় লেখা হয়, তখন সমালোচকদের ভাষ্যকার না হয়ে সন্ত্রকার হওয়াই সংগত। তাঁরা যদি কোনো নব্যগ্রন্থের খেই ধরিয়ে দেন তা হলেই আমরা পাঠকবগ যথেস্ট মনে করি। কিন্তু ঐরাপ করতে গেলে তাঁদের ব্যাবসা মারা যায়। সতরাং তাঁরা যে সমালোচনার রীতিপরিবতন করবেন। এরপ। আশা করা নিৰ্ম্মফল।। শ্ৰীযক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যুক্তির প্রতিবাদ করে একটি প্রবন্ধ লেখেন। আমােব ঠিক মনে নেই যে, তিনি সাহিত্যেও অত্যুক্তি যে নিন্দনীয় এ কথাটা বলেছেন কি না। সে যাই হোক, রবীন্দ্ৰবাবর সেই তীব্র প্রতিবাদে বিশেষ কোনো সফল হয়েছে জ্বলে মনে হয় না। বরং দেখতে পাই যে, অত্যুক্তির মাত্রা ক্ৰমে সপতমে চড়ে গেছে। সমালোচকদের অত্যুক্তিটা প্রায় প্রশংসা করবার সময়েই দেখা যায়। বোধ হয় তাঁদের বিশ্ববাস যে, নিন্দা-জিনিসটা সোজা কথাতেই করা চলে। কিন্তু প্ৰশংসাকে ডালপালা দিয়ে পত্ৰে-পত্ৰলেপ সাজিয়ে বার করা উচিত। কেননা, নিন্দকের চাইতে সমাজে চাটকারের মর্যাদা অনেক বেশি। কিন্তু আসলে অতিনিন্দা এবং অতিপ্ৰশংসা উভয়ই সমান জঘন্য। কারণ, অত্যুক্তির ‘অতি’ শব্ধ সরাচি এবং ভদ্রতা নয়, সত্যেরও সীমা অতিক্রম করে যায়। এক কথায়, অত্যুক্তি মিথ্যোত্তি। মিছা কথা মানষে বিনা কারণে বলে না। হয়। ভয়ে নাহয় কোনো সবার্থসিদ্ধির জন্যই লোকে সত্যের অপলাপ করে। সম্পভবত অভ্যাসবশত মিথ্যাকে সত্যের অপেক্ষা অধিকমাত্রায় কেউ-কেউ চৰ্চা করে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলা চাচা করলে ক্ৰমে তা উদ্দেশ্যবিহীন অভ্যাসে পরিণত হয়। বাংলা সাহিত্যে আজকাল যেরপে নিলাজ অতিপ্ৰশংসার বাড়াবাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। তাতে মনে হয় যে, তার মলে উদ্দেশ্য এবং অভ্যাস দই জিনিসই আছে। এক-একটি ক্ষদ লেখকের ক্ষদ্র পস্তকের যে-সকল বিশেষণে সস্তুতিবাদ করা হয়ে থাকে। সেগলি বোধ হয় শেকসপিয়র কিংবা কালিদাসের সম্পবন্ধে প্রয়োগ করলেও একটা বেশি। হয়ে পড়ে। সমালোচনা এখন বিজ্ঞাপনের মাতি ধারণ করেছে। তার থেকে বোঝা যায় যে, যাতে বাজারে বইয়ের ভালোরকম কাটতি হয়। সেই উদ্দেশ্যে আজকাল সমালোচনা লেখা হয়ে থাকে। যে উপায়ে পেটেস্ট ঔষধ বিক্লিক করা