পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষার কথা 8(S যাবেন। অতএব মিলের অভাব্যবশতই আমাকে ক্ষান্ত থাকতে হচেছ। অবশ্য দরশ পরশ সরস হরষ প্রভাতি শব্দকে আকার দিয়ে বরষার সঙ্গে মেলানো যায়। কিন্তু সে কাজ রবীন্দ্রনাথ আগেই করে বসে আছেন। আমি যদি ঐ-সকল শব্দকে সাকার করে ব্যবহার করি, তা হলে আমার চুরিবেদ্য ঐ আকারেই ধরা পড়ে যাবে। ঐরােপ শব্দসমােহ আত্মসাৎ করা চৌষবিত্তি কি না, সে বিষয়ে অবশ্য প্রচন্ড মতভেদ আছে। নব্যকবিদের মতে মাতৃভাষা যখন কারো পৈতৃকসম্পপত্তি নয়, তখন তা নিজের কাষোপযোগী করে ব্যবহার করবার সকলেরই সমান অধিকার আছে। ঈষৎ বদল-সদল করেছেন বলে রবীন্দ্রনাথ ও-সব কথার আর-কিছর পেটেন্ট নেন নি। যে, আমরা তা ব্যবহার করলে চোর-দায়ে ধরা পড়ব-বিশেষত যখন তাদের কোনো বদলি পাওয়া যায় না। যে কথা একবার ছাপা হয়ে গেছে, তাকে আর চাপা দিয়ে রাখবার জো নেই; সে যার-তার কবিতায় নিজেকে ব্যক্ত করবে। নব্যকবিদের আরএকটি কথা বলবার আছে, যা বিশেষ প্ৰণিধানযোগ্য। সে হচ্ছে এই যে, রবীন্দ্রনাথ যদি অনেক কথা আগে না ব্যবহার করে ফেলতেন তা হলে পরবতী কবিরা তা ব্যবহার করতেন। পরে জন্মগ্রহণ করার দরবন সে সযোগ হারিয়েছি বলে আমাদের যে চুপ করে থাকতে হবে, সাহিত্যজগতের এমন-কোনো নিয়ম নেই। এ মত গ্রাহ্য করলেও বর্ষার বিষয়ে কবিতা লেখার আর-একটি বাধা আছে। কলম ধরলেই মনে হয় মেঘের সম্পবন্ধে লিখব আর কি ছাই ? বর্ষার রপগণ সম্পবন্ধে যা-কিছ বক্তব্য ছিল তা কালিদাস সবই বলে গেছেন, বাকি যা ছিল তা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। এ বিষয়ে একটি নািতন উপমা কিংবা নািতন অন্যপ্রাস খাঁজে পাওয়া ভার। যদি পরিচিত সকল বসনভূষণ বাদ দিয়ে বর্ষার নগন্নমতির বণনা করতে উদ্যত হই, তা হলেও বড়ো সবিধে করতে পারা যায় না। কারণ, বর্ষার রােপ কালো, রস জোলো, গন্ধ পঙ্কজের নয়— পণ্ডেকর, স্পশা ভিজে, এবং শব্দ বেজায়। সতরাং যে বর্ষা আমাদের ইন্দ্ৰিয়ের বিষয়ীভূত, তার যথাযথ বর্ণনাতে বস্তুতন্ত্রতা থাকতে পারে। কিন্তু কবিত্ব থাকবে কি না, তা বলা কঠিন। কবিতার যা দরকার এবং যা নিয়ে কবিতার কারবার, সেই-সব আনষঙ্গিক উপকরণও এ ঋতুতে বড়ো-একটা পাওয়া যায় না। এ ঋতু পাখি-ছাট। বর্ষায় কোকিল মৌন, কেননা দদার বক্তা; চকোর আকাশদেশত্যাগী, আর চাতক ঢের হয়েছে বলে ফটিকজাল শব্দ আর মাখেও আনে না। যে-সকল চরণ ও চঞ্চসার পাখি, যথা বিক হাঁস সারস হাড়গিলে ইত্যাদি, এ ঋতুতে স্বেচ্ছামত জলে-থলে ও নভোমন্ডলে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করে, তাদের গঠন এতই অদ্ভুত এবং তাদের প্রকৃতি এতই তামসিক যে, অরা যে বিশ্ববামিত্রের সন্টি সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই। বস্তুতন্ত্রতার খাতিরে আমরা অনেক দর অগ্রসর হতে রাজি আছি, কিন্তু বিশ্ববামিত্রের জগৎ পর্যন্ত নয়। তার পর কাব্যের উপযোগী ফল ফল লতা পাতা গাছ বর্ষায় এতই দলভ যে, মহাকবি কালিদাসও ব্যাঙের ছাতার বণনা করতে বাধ্য হয়েছেন। সংস্কৃত ভাষার ঐশীবয্যের মধ্যে এ দৈন্য ধরা পড়ে না, তাই কালিদাসের কবিতা বেচে গেছে। বর্ষার দটি নিজস্ব ফল হচ্ছে কদম আর কেয়া। অপবিতায়