পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 V O প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ পল্পজগতে এ দটির আর তুলনা নেই। অপরাপর সকল ফল অধবিকশিত ও অর্ধনিমীলিত। রাপের যে অর্ধপ্ৰকাশ ও অর্ধগোপনেই তার মোহিনীশক্তি নিহিত, এ সত্য সবগের আসরারা জানতেন। মনিঋষিদের তপোভঙ্গ করবার জন্য তাঁরা উক্ত উপায়ই অবলম্ববন করতেন। কারণ ব্যক্তি-দ্বারা ইন্দ্রিয় এবং অব্যক্ত-বোরা কল্পনাকে অভিভূত না করতে পারলে দেহ ও মনের সমন্টিকে সম্পণে মোহিত করা যায় না। কদম কিন্তু একেবারেই খোলা, আর কেয়া একেবারেই বোজা। একের ব্যক্তি-রপ নেই, অপরের গতি-গন্ধ নেই; অথচ উভয়েই কণ্টকিত। এ ফল দিয়ে কবিতা সাজানো যায় না। এ দটি ফল। বর্ষার ভূষণ নয়, অস্ত্র; গোলা এবং সঙিনের সঙ্গে এদের সাদশ্য সম্পন্ট। পড়বে যা দেখানো গেল, সে-সব তো অঙ্গহীনতার পরিচয়। কিন্তু এ ঋতুর প্রধান দোষ হচ্ছে, আর-পাঁচটি ঋতুর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই; আর-পাঁচটি ঋতুর সঙ্গে এ ঋতু খাপ খায় না। এ ঋতু বিজাতীয় এবং বিদেশী, অতএব অপশ্য। এই প্রক্ষিপ্ত ঋতু আকাশ থেকে পড়ে, দেশের মাটির ভিতর থেকে আবির্ভূত হয় না। বসন্তের নবীনতা সজীবতা ও সরসতার মল হচেছ ধরণী। বসন্তের ঐশ্ববর্য হচ্ছে দেশের ফলে, দেশের কিশলয়ে। বসন্তের দক্ষিণপবনের জন্মস্থান যে ভারতবর্ষের মলয়পবীত, তার পরিচয় তার সােপশেই পাওয়া যায়; সে পবন আমাদের দেহে চন্দনের প্রলেপ দিয়ে দেয় । বসন্তের আলো, সত্য ও চন্দ্রের আলো। ও দটি দেবতা তো সম্পণে আমাদেরই আত্মীয়; কেননা, আমরা হয় সত্যবংশীয় নয়। চন্দ্ৰবংশীয়- এবং ভবলীলা সংবরণ করে আমরা হয়। সর্ষ লোকে নয়। চন্দ্ৰলোকে ফিরে যাই। অপর পক্ষে, মেঘ যে কোন দেশ থেকে আসে তার কোনো ঠিকানা নেই। বর্ষা যে জল বর্ষণ করে, সে কালাপানির জল। বর্ষার হাওয়া এতই দর্যন্ত এতই অশিক্ষািট এতই প্রচন্ড এবং এতই সবাধীন যে, সে-যে কোনো অসভ্য দেশ থেকে আসে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার পর, বর্ষায় নিজস্ব আলো হচ্ছে বিদ্যাৎ। বিদ্যুতের আলো এতই হাস্যোলজেবল এতই চঞ্চল এতই ব্যক এবং এতই তীক্ষা যে, এই প্রশান্ত মহাদেশের এই প্রশান্ত মহাকাশে সে কখনোই জন্মলাভ করে নি। আর-এক কথা, বসন্ত হচ্ছে কলকন্ঠ কোকিলের পাgম সরে মােখরিত। আর বর্ষার নিনাদ ? তা শনে শােধ যে কানো হাত দিতে হয় তা নয়, চোেখও বজিতে হয়। বর্ষার প্রকৃতি যে আমাদের প্রকৃতির সম্প্রপািণ বিপরীত, তার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় ও-ঋতুর ব্যবহারে। এ-ঋতু শােধ, বেখাপা নয়, অতি বেয়াড়া। বসন্ত যখন আসে, সে এত অলক্ষিতভাবে আসে যে, পঞ্জিকার সাহায্য ব্যতীত কবে মাঘের শেষ হয়। আর কবে ফালগনের আরম্ভ হয়, তা কেউ বলতে পারেন না। বসন্ত, ব3িকমের রজনীর মতো, ধীরে ধীরে অতি ধীরে ফলের ডালা হাতে করে দেশের হৃদয়মন্দিরে এসে প্রবেশ করে। তার চরণস্পর্শে ধরণীর মাখে, শব-সাধকের শবের ন্যায়, প্রথমে বর্ণ দেখা দেয়, তার পরে ভ্ৰম কম্পিত হয়, তার পরে চক্ষ উল্মীলিত হারা, তার পর তার নিশবাস পড়ে, তার পর তার সবাঙগ শিহরিত হয়ে ওঠে। এ-সকল জীবনের লক্ষণ, শােধ পৰ্যায়ক্ৰমে নয়, ধীরে ধীরে অতি ধীরে প্রকাটিত হয়। কিন্তু