পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

898 erre এই অতীতের সাদা কাগজের উপর আমরা এতদিন স্বেচ্ছায় এবং সবচ্ছন্দচিত্তে আমাদের মনোমত ইতিহাস লিখে যাচ্ছিলাম। ইতিমধ্যে বাংলায় একদল বৈজ্ঞানিক জন্মগ্রহণ করে সে ইতিহাসকে উপন্যাস বলে হেসে উড়িয়ে দিয়ে এমন ইতিহাস রচনা করতে কৃতসংকলপ হলেন, যার ভিতর রসের লেশমাত্র থাকবে না-থাকবে শােধ বস্তুতন্ত্রতা। এরা আহেলা বিলেতি শিক্ষার মোহে এ কথা ভুলে গেলেন যে, অতীতে হিন্দরে প্রতিভা, ইতিহাসে নয় পরাণে, বিজ্ঞানে নয় দর্শনে, ফটে উঠেছিল। অতীতের মমগ্রহণ না করে তার চমগ্রহণ করতে যাওয়াতেই সে দেশত্যাগী হতে বাধ্য হল। এতে তাঁদের কোনো ক্ষতি নেই, মধ্যে থেকে সাহিত্য শািন্ধ দেউলে হয়ে গেল। বিজ্ঞানের প্রদীপ যে সাহিত্যের লালবাতি- এ কথা কে না। 百T可1 8 আমরা সাহিত্যিকের দল অতীতকে আকাশ হিসেবে দেখতুম, অৰ্থাৎ আমাদের কাছে ও-বস্তু ছিল একটি অখন্ড মহাশন্য। সতরাং সেই আকাশে আমরা কলপনার সাহায্যে এমন-সব গিরি-পারী নিমাণ ক’রে চলেছিলাম, যার ত্ৰিসীমানার ভিতর বিজ্ঞানের গোলাগলি পৌছয় না। বাংলার নবীন প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এ কার্যটি অকায বলেই স্থির হল; কেননা, বৈজ্ঞানিক-মতে ইতিহাস গড়বার জিনিসও নয়, পড়বার জিনিসও নয়-- শধ্যে ঢোঁড়বার জিনিস। সতরাং ও-জিনিসের অন্বেষণ পায়ের নীচে করতে হবে।-- মাথার উপরে নয়। যাঁরা আবিস্কার করতে চান তাঁদের কম ক্ষেত্র ভূলোক, দ্যলোক নয়; কেননা, আকাশদেশ তো স্বতঃআবিস্কৃত। এই কারণে, সক্রেটিস যেমন দশনকে আকাশ থেকে নামিয়ে মাটির উপরে এনে ফেলেছিলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকেরাও তেমনি ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আকাশ থেকে পেড়ে মাটির নীচে পতে ফেলেছেন। G এ দলের মতে ভারতবর্ষের আন্তীত পশুত্বপ্রাপ্ত হলেও পঞ্চভূতে মিশিয়ে যায় নি; কেননা, কাল অতীতেীয় অগিনেসৎবনার করে না, শধ তার গোর দেয়। এক কথায়, অতীতের আত্মা সবগে গমন করলেও তার দেহ পাতালে প্রবেশ করে। তাই ভারতবর্ষ ইতিহাসের মহাশমি4ান নয, মহাগোরস্থান। অতএব ভারতবর্ষের কবর খড়ে তার ইতিহাস বার করতে হবে । এই জ্ঞান হওয়ামাত্র আমাদের দেশের যত বিদ্ধবান ও বদ্ধিমান লোকে কোদাল পাড়তে শার করলেন এই আশায় যে, এ দেশের উত্তরে দক্ষিণে পর্বে পশ্চিমে, যেখানেই কোদাল মারা যাবে, সেখানেই লািস্তসভ্যতার গতিধন বেরিয়ে পড়ধে। আর সে ধনে আমরা এমনি ধনী হয়ে উঠিব যে, মনোজগতে খোরপোশের জন্য আমাদের আর চাষ-আবাদ করতে হবে না। এই খোঁড়াখাড়ির ফলে সোনা না হোক তামা বেরিয়েছে, হীরে না হোক