পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরের কথা 8 CSS দেশী বিলেতি সংগীতের মধ্যে আর-একটা সম্পন্ট প্রভেদ আছে। বিলেতি সংগীতে হারমনি আছে, আমাদের নেই। এই হারমনি-জিনিসটে স্বরের যন্তাক্ষর বৈ আর-কিছই নয়, অর্থাৎ ও-বস্তু হচ্ছে সংগীতের বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয়ভাগের অধিকারে। আমাদের সংগীত এখনো প্রথমভাগের দখলেই আছে। আমাদের পক্ষে সংগীতের দ্বিতীয়ভাগের চর্চা করা উচিত কি না, সে বিষয়ে কেউ মনস্থির করতে পারেন নি। অনেকে ভয় পান যে, দ্বিতীয়ভাগ ধরলে তাঁরা প্রথমভাগ ভুলে যাবেন। তা ভুলািন আর না-ভলন, তাঁরা যে প্রথমভাগকে আর আমল দেবেন না, সে বিষয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের সাহিত্য থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একবার যন্তাক্ষর শিখলে আমরা অযন্তাক্ষরের ব্যবহার যণ্ডিযন্ত মনে করি নে এবং অপর-কেউ করতে গেলে অমনি বলে উঠি, সাহিত্যের সবনাশ হল, ভাষাটা একদম অসাধ, এবং অশদ্ধ হয়ে গেল। তবে সংগীতে এ বিপদ ঘটবার বিশেষ সম্পভাবনা নেই। সেদিন একজন ইংরেজ বলছিলেন যে, যে সংগীতে ছয়টি রাগ এবং প্রতি রাগের ছয়টি করে সত্ৰী আছে, সেখানে হারমনি কি করে থাকতে পারে। আমি বলি, ও তো ঠিকই কথা, বিশেষত স্বামী যখন মতিমান রাগ আর সন্ত্রীরা প্রত্যেকেই এক-একটি মতিমতী রাগিণী। অবশ্য এরাপ হবার কারণ আমাদের সংগীতের কৌলীন্য। আমাদের রাগ-সকল যদি কুলীন না হত, তা হলেও আমরা হারমনির চর্চা করতে পারতুম না; কেননা, ও-বস্তু আমাদের ধাতে নেই। আমাদের সমাজের মতো আমাদের সংগীতেও জাতিভেদ আছে, আর তার কেউ আর-কারো সঙ্গে মিশ্রিত হতে পারে না। মিশ্রিত হওয়া দরে থাক, আমরা পরস্পর পরস্পরকে সপশ করতে ভয় পাই; কেননা, জাতির ধামই হচ্ছে জাত বাঁচিয়ে মরা। আর মিলে-মিশে এক হয়ে যাবার নামই হচ্ছে হারমনি। ८°ष s७२७