পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাপের কথা 8 AG ছাড়া আর বড়ো-কছা নেই; আর সে রূপবর্ণনাও আসলে দেহের, বিশেষত রমণীদেহের, বর্ণনা; কেননা, সে কাব্যসাহিত্যে যে প্রকৃতিবর্ণনা আছে তাও বস্তুত রমণীর রািপবর্ণনা। প্রকৃতিকে তাঁরা সন্দরী রমণী হিসেবেই দেখেছিলেন। তার যে অংশ নারী-অঙ্গের উপমেয় কি উপমান নয়, তার স্বরপ হয় তাঁদের চোখে পড়ে নি, নয় তা তাঁরা রূপ বলে গ্রাহ্য করেন নি। সংস্কৃত সাহিত্যে হরেকরকমের ছবি আছে, কিন্তু ল্যান্ডসকেপ নেই বললেই হয়; অর্থাৎ মানষের সঙ্গে নিঃসম্পক প্রকৃতির অস্তিত্বের বিষয় তাঁরা সম্পণে উদাসীন ছিলেন। ল্যান্ডস কেপ প্রাচীন গ্রীস কিংবা রোমের হাত থেকেও বেরোয় নি। তার কারণ, সেকালে মানষে মানষি বাদ দিয়ে বিশবিসংসার দেখতে শেখে নি। এর প্রমাণ শােধ আর্টে নয়, দর্শনে-বিজ্ঞানেও পাওয়া যায়। আমরা আমাদের নববিজ্ঞানের প্রসাদে মানষেকে এ বিশেবর পরমাণতে পরিণত করেছি, সম্পভবত সেই কারণে আমরা মানবদেহের সৌন্দয অবজ্ঞা করতে শিখেছি। আমাদের পবিপরীষেরা কিন্তু সে সৌন্দৰ্যকে একটি অমল্য বস্তু বলে মনে করতেন; শািন্ধ স্ত্রীলোকের নয়, পরিষের রূপের উপরও তাঁদের ভক্তি ছিল। যাঁর অলোকসামান্য রােপ নেই, তাঁকে এ দেশে পরিাকালে মহাপরিষ বলে কেউ মেনে নেয় নি। শ্ৰী রামচন্দ্র বন্ধদেব শ্ৰীকৃষ্ণ প্রভাতি অবতারেরা সকলেই সৌন্দয্যের অবতার ছিলেন। রপ-গণের সন্ধিবিচ্ছেদ করা সেকালের শিক্ষার একটা প্রধান অঙ্গ ছিল না। শােধ তাই নয়, আমাদের পােবপরিষদের কদাকারের উপর এতটাই ঘণা ছিল যে, পরাকালের শদ্রেরা যে দাসত্ব হতে মন্তি পায় নি। তার একটি প্রধান কারণ তারা ছিল কৃষ্ণবর্ণ এবং কুৎসিতঅন্তত আষদের চোখে। সেকালের দর্শনের ভিতর অরপের জ্ঞানের কথা থাকলেও সেকালের ধামর্শ রপজ্ঞানের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। পরব্রহ্ম নিরাকার হলেও ভগবান, মন্দিরে মন্দিরে মতিমান। প্রাচীন মতে নিগণ-ব্ৰহ্ম অরপ এবং সগণব্ৰহ্ম সরােপ। Vy সভ্যতার সঙ্গে সৌন্দয্যের এই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকবার কারণ, সভ্যসমাজ বলতে বোঝায় গঠিত-সমাজ। যে সমাজের গড়ন নেই তাকে আমরা সভ্যসমাজ বলি নে । এ কালের ভাষায় বলতে হলে সমাজ হচ্ছে একটি অগ্যানিজম; আর আপনারা সকলেই জানেন যে সকল অগ্যানিজম একজাতীয় নয়, ও-বস্তুর ভিতর উচুনিচুর প্ৰভেদ বিস্তর। অগ্যানিক-জগতে প্রোটোেপাল্যাজমা হচ্ছে সবচাইতে নীচে এবং মানষি সবচাইতে উপরে। এবং মানষের সঙ্গে প্রোটৌশল্যাজমের প্রত্যক্ষ পার্থক্য হচ্ছে রূপে; অপর-কোনো প্ৰভেদ আছে কি না, সে হচ্ছে তকের বিষয়। মানষে বে প্রোটোপলাজমের চাইতে রূপবান, এ বিষয়ে, আশা করি, কোনো মতভেদ নেই। এই থেকে প্রমাণ হয় যে, যে সমাজের চেহারা যত সন্দর সে সমাজ তত সভ্য। এরাপ হবার একটি স্পষ্ট কারণও আছে। এ জগতে রূপ হচ্ছে শক্তির চরম বিকাশ: সমাজ গড়বার জন্য মানষের শক্তি চাই এবং সান্দর করে গড়বার জন্য তার চাইতেও