পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S8C V প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ বেশি শক্তি চাই। সতরাং মানষ। যেমন বাড়বার মাখে ক্ৰমে অধিক সশ্রী হয়ে ওঠে এবং মরবার মাখে ক্ৰমে অধিক কুশ্রী হয়- জাতের পক্ষেও সেই একই নিয়ম খাটে। কদৰ্য্যতা দিবলতার বাহালক্ষণ, সৌন্দৰ্য শক্তির। এই ভারতবর্ষের অতীতের দিকে দণ্টিপাত করলেই দেখা যায় যে, যখনই দেশে নবশক্তির আবিভাব হয়েছে তখনই মাঠে-মন্দিরে-বেশে-ভূষায় মানষের আশায়-ভাষায় নব্বসৌন্দৰ্য ফটে উঠেছে। ভারতবর্যের আর্টের বৌদ্ধযাগ ও বৈষ্ণবযগ। এই সত্যেরই জাজবল্যমান প্রমাণ। আমাদের এই কোণঠাসা দেশে যেদিন চৈতন্যদেবের আবিভাব হয়। সেইদিনই বাঙালি সৌন্দয্যের আবিস্কার করে। এর পরিচয় বৈষ্ণবসাহিত্যে পাওয়া যায় । কিন্তু সে সৌন্দর্যবদ্ধি যে টিকল না, বাংলার ঘরে-বাইরে যে তা নানারপে নানা আর্কারে ফাটল না— তার কারণ চৈতন্যদেব যা দান করতে এসেছিলেন তা ষোলোআনা গ্রহণ করবার শক্তি আমাদের ছিল না। যে কারণে বাংলার বৈষ্ণবধম বাঙালি সমাজকে একাকার করবার চেন্টায় বিফল হয়েছে, হয়তো সেই একই কারণে তা বাঙালি সভ্যতাকে সাকার করে তুলতে পারে নি। ভক্তির রস আমাদের বকে ও মখে গড়িযেছে, আমাদের মনে ও হাতে তা জমে নি। ফলে, এক গান ছাড়া আরকিছকেই আমরা নবরােপ দিতে পারি নি। Գ এ-সব কথা যদি সত্য হয় তা হলে স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের রােপজজ্ঞানের অভাবটা আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দেয় না। কিন্তু এ কথা মািখ ফটে বললেই আমাদের দেশের অন্ধের দল লগািড় ধারণ করবেন। এর কারণ কি, তা বলছি। সত্য ও সৌন্দয, এ দটি জিনিসকে কেউ উপেক্ষা করতে পারেন না। হয় এদের ভক্তি করতে হবে, নয। অভিত্তি করতে হবে। অর্থাৎ সত্যকে উপেক্ষা করলে মিথ্যার আশ্রয় নিতেই হবে, আর সন্দরকে অবজ্ঞা করলে কুৎসিতের প্রশ্রয় দিতেই হবে। এ পথিবীতে যা-কিছ আছে, তা দই শ্রেণীতে বিভক্ত- এক স, আর-এক কু। ‘সি’কে অজন না করলে ‘কু’কে বজন করা কঠিন। আমাদের দশাও হয়েছে। তাই। আমাদের সন্দরের প্রতি যে অন্যরাগ নেই, শািন্ধ, তাই নয়, ঘোরতর বিরাগ আছে । আমরা দিনে-দপরে চিৎকার করে বলি যে, সাহিত্যে যে ফলের কথা জ্যোৎস্নার কথা লেখে সে লেখক নিতান্তই অপদাৰ্থ । এদের কথা শনলে মনে হয় যে, সব ফলই যদি ডুমর হয়ে ওঠে, আর অমাবস্যা যদি বারোমেসে হয়, তা হলেই এ পথিবী ভূস্বৰ্গ হয়ে উঠবে।; এবং সে সবগে অবশ্য কোনো কবির পথান হবে না। চন্দ্ৰ যে সৌরমন্ডলের মধ্যে একটি প্রক্ষিপত। গোলক, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ও রিফ্লেক্টর ভূগবান আকাশে ঝলিয়ে দিয়েছেন ; সতরাং জ্যোৎস্না যে আছে, তার জন্য কবি দায়ী নন, দায়ী স্বয়ং ভগবান। কিন্তু এই জ্যোৎস্নাবিদ্বেষ থেকেই এদের প্রকৃত মনোভাব বোঝা যায়। এ রাগটা আসলে আলোর উপর রাগ। জ্ঞানের আলোক যখন আমাদের