পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গ সাহিত্যের নবযাগ OS আমার ও প্ৰসংগ উত্থাপন করবার অপর একটি কারণ হচেছ এইটি দেখিয়ে দেওয়া যে, যা চিত্রকলায় দোষ বলে গণ্য তাই আবার আজকাল এ দেশে কাব্যকলায় গণ বলে NTFS প্রকৃতির সহিত লেখকদের যদি কোনোরপ পরিচয় থাকত তা হলে শািন্ধ বর্ণের সঙ্গে বণের যোজনা করলেই যে বৰ্ণনা হয়, এ বিশবাস তাঁদের মনে জন্মাত না। এবং যে বস্তু, কখনো তাঁদের চমচক্ষর পথে উদয় হয় নি, তা অপরের মনশ্চক্ষর সমখে খাড়া করে দেবার চেস্টারপে পীডশ্রম তাঁরা করতেন না। সম্পভবত এ যাগের লেখকদের বিশ্ববাস যে, ছবির বিষয় হচ্ছে দশ্যবস্তু আর লেখার বিষয় হচেছ অদশ্যমান। সতরাং বাস্তবিকতা চিত্রকলায় অজনীয় এবং কাব্যাকলায় বিজনীয়। সাহিত্যে সেহাইকলমের কাজ করতে গিয়ে যাঁরা শােধ কলমের কালি ঝাড়েন, তাঁরাই কেবল নিজের মনকে প্ৰবোধ দেবার জন্য পাবোেন্ত মিথ্যাটিকে সত্য বলে গ্রাহ্য করেন। ইন্দ্ৰিয়জ প্রত্যক্ষ জ্ঞানই হচ্ছে সকল জ্ঞানের মল। বাহ্যজ্ঞানশন্যতা অন্তদন্টির পরিচায়ক নয়। দরদীঘিটি লাভ করার অর্থ চোখে চালাশে-ধরা নয়। দেহের নবদ্বার বন্ধ করে দিলে মনের ঘর অলৌকিক আলোকে কিংবা পারলৌকিক অন্ধকারে পণ্য হয়ে উঠবে, বলা কঠিন। কিন্তু সব লোকবিদিত সহজ সত্য এই যে, যাঁর ইন্দ্রিয় সচেতন এবং সজাগ নয় কাব্যে কৃতিত্ব লাভ করা তাঁর পক্ষে অসম্পভব। জ্ঞানাঞ্জনশলাকার অপপ্রয়োগে যাঁদের চক্ষ উন্মীলিত না হয়ে কানা হয়েছে, তাঁরাই কেবল এ সত্য মানতে নারাজ হবেন। প্রকৃতিদত্ত উপাদান নিয়েই মন বাক্যচিত্র রচনা করে। সেই উপাদান সংগ্ৰহ করবার, বাছাই করবার এবং ভাষায় সাকার করে তোেলবার ক্ষমতার নামই কবিত্বশক্তি। বস্তুজ্ঞানের অটল ভিত্তির উপরেই কবিকল্পনা প্রতিঠিত। মহাকবি ভাস বলেছেন যে, ‘সন্নিবিল্ট লোকের রােপ বিপর্যয় করা অন্ধকারের ধর্ম। সাহিত্যে ওরাপ করাতে প্ৰতিভার পরিচয় দেওয়া হয় না, কারণ প্রতিভার ধাম হচেছ প্রকাশ করা, অপ্রত্যক্ষকে প্রত্যক্ষ করা- প্রত্যক্ষকে অপ্রত্যক্ষ করা নয়। অলংকারশাস্ত্রে বলে অপ্রকৃত অতিপ্রকৃত এবং লৌকিক জ্ঞানবিরদ্ধে বর্ণনা কাব্যে দোষ হিসেবে গণ্য। অবশ্য পথিবীতে যা সত্যই ঘটে থাকে তার যথাযথ বর্ণনাও সব সময়ে কাব্য নয়। আলংকারিকেরা উদাহরণস্বরাপ দেখান যে, 'গেীঃ তৃণমা অত্তি' কথাটা সত্য হলেও ও কথা বলায় কবিত্বশক্তির বিশ্লেষ পরিচয় দেওয়া হয় না। তাই বলে “গোররা ফলে ফলে মধ্যপান করছে’ এরপ কথা বলতে কি বস্তুজ্ঞান কি রসজ্ঞান কোনোরীপ জ্ঞানের পরিচয় দেওয়া হয় না। এ স্থলে বলে রাখা আবশ্যক যে, নিজেদের সকলপ্রকার ত্রটির জন্য আমাদের পবর্ণপরিষদের দায়ী করা বৰ্তমান ভারতবাসীদের একটা রোগের মধ্যে হয়ে পড়েছে। আমাদের বিশ্ববাস, এ বিশব নিশবার এবং মায়াময় বলে আমাদের পােবপরিষেরা বাহ্যজগতের কোনোরাপ খোঁজখবর রাখতেন না। কিন্তু এ কথা জোর করে বলা যেতে পারে যে, তাঁরা কস্মিনকালেও অবিদ্যাকে পরাবিদ্যা বলে ভুল করেন নি, কিংবা একলম্মেফ যে মনের পবোেন্ত প্রথম অবস্থা হতে দ্বিতীয় অবস্থায় উত্তীণ হওয়া যায়, এরাপ মতও প্রকাশ করেন নি। বরং শাস্ত্র এই সত্যেরই পরিচয় দেয় যে, অপরাবিদ্যা সম্পপণ্য আয়ত্ত না হলে কারো পক্ষে পরাবিদ্যা লাভের অধিকার