পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SO প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ আছে, অতএব সে পারিপাশিবকে অবস্থার সম্পৰ্ণে অধীন নয়, সে এক দেশ ছেড়ে আর-এক দেশে চলে যেতে পারে। এইটকু তার সবিধা। কিন্তু তার অসবিধা এই যে, সে নিজগণে জড়জগৎ থেকে নিজের খাবার তৈরি করে নিতে পারে না, তাকে তৈরি-খাবার অতিকন্টে সংগ্রহ করে জীবনধারণ করতে হয়। পোষ্যমানা জানোয়ারের কথা অবশ্য সর্বতন্ত্র, সে উদ্ভিদেরই শামিল; কেননা সে শিকড়বদ্ধ না হোক, শিকলবদ্ধ। মানষি পারিপাশিবকে অবস্থার অধীন হতে বাধ্য নয়; সে স্থানত্যাগ করতেও পারে, পারিপাশিবক অবস্থার বদল করেও নিতে পারে। একালের ভাষায় যাকে ‘বেস্টনী’ বলে মানষের পক্ষে তা গণ্ডী নয়, মানষের স্থিতিগত তার স্বেচ্ছাধীন। এই তার সবিধা। তার অসবিধা এই যে, তাকে জীবনধারণ করবার জন্য শরীর ও মন দই খাটাতে হয়। পশকেও শরীর খাটাতে হয়, মন খাটাতে হয় না; উদ্ভিদকে শরীর মন দায়ের কোনোটিই খাটাতে হয় না। অর্থাৎ উদ্ভিদের জীবন সবচাইতে আরামের। পশার শরীরের আরাম না থাক, মনের আরাম আছে। মানষের শরীর-মন দায়ের কোনোটিরই আরাম নেই। আমরা যদি মনের আরামের জন্য লালায়িত হই তা হলে আমরা পশকে আদশ করে তুলব; আর যদি দেহমান দয়ের আরামের জন্য লালায়িত হই তা হলে আমরা উদ্ভিদকে আদর্শ করে তুলব, এবং সেই আদশ অনসারে নিজের জীবন গঠন করতে চেন্টা করব। এ চেস্টার ফলে আমরা শােধ মনষ্যেত্ব হারিয়ে বসব। “সািবধমে নিধনং শ্রেয়ঃ পরোধম ভয়াবহঃ' এই সনাতন সত্যটি মানষের সব দা সমরণ রাখা কতব্য, নচেৎ মানবজীবন রক্ষণ করা অসম্পভব। আর-একটি কথা, মানষের পক্ষে জীবন রক্ষা করার অর্থ জীবনের উন্নতি করা। মানষের ভিতরে-বাইরে যে গতিশক্তি আছে, তা মানষের মতির দ্বারা নিয়মিত ও চালিত। এই মতিগতির শািভপরিণয়ের ফলে যা জন্মলাভ করে তারই নাম উন্নতি। আমাদের মনের অর্থাৎ বদ্ধি ও হৃদয়ের উৎকৰ্ষ সাধনেই আমরা মানবজীবনের সার্থকতা লাভ করি। জীবনকে সম্পপণ্য জাগ্রত করে তোলা ছাড়া আয় বদ্ধির অপর কোনো অৰ্থ নেই। শ্রাবণ ১৩২৪