পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GS প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ না পারলে পরাবিদ্যায়। কারো অধিকার জন্মায় না। উপরোক্ত মতটি যে সম্পপণ্য সত্য, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, বিজ্ঞানের চর্চা ত্যাগ করলে বহর সম্পবন্ধে আমাদের ভ্ৰমজ্ঞান হওয়া অবশ্যম্ভাবী, কারণ বিজ্ঞান হচেছ পরীক্ষিত জ্ঞান ; বৈজ্ঞানিকেরা সত্যের টাকা না বাজিয়ে নেন না। বহ খন্ডসত্যের উপর যদি এক মোটসত্যের প্রতিষ্ঠা না করা যায়, তা হলে বহ খন্ডমিথ্যার উপর সে সত্যের যে প্রতিদ্ঠা করা যেতে পারে, এরপ মিছা আশা শােধ পাগলে করতে পারে। আসল কথা এই যে, দর্শনে আমরা ব্যশিট ও সমটি এই দাইটি ভাবকে পথক। করে নিলেও এ বিশব ব্যস্তসমস্ত। তাই সমটির জ্ঞানের ভিতর ব্যটির জ্ঞান প্রচ্ছন্ন থাকে, এবং ব্যটির জ্ঞান সমটির জ্ঞানের অপেক্ষা রাখে। কেননা বস্তুত ও-দই একসঙ্গে জড়ানো। তত্ত্বজ্ঞানে ও বিজ্ঞানে প্ৰভেদ এই যে, সমন্টিঙজ্ঞান পরাবিদ্যায় এক ভাবে পাওয়া যায়, আর অপরাবিদ্যায় আর-এক ভাবে পাওয়া যায়। পরাবিদ্যার সমন্টিজ্ঞান হচ্ছে মািলত একত্বের জ্ঞান। অপর পক্ষে বহরকে যোগ দিয়ে যে সমন্টি পাওয়া যায়, তারই জ্ঞান হচেছ বিজ্ঞানান মোদিত সমষ্টিজ্ঞান। তত্ত্বজ্ঞানী এক জেনে সব জানতে চান, আর বৈজ্ঞানিক সবকে একত্র করে জানতে চান। এ দায়ের ভিতর পার্থক্য আছে কিন্তু বিরোধ নেই। সতরাং বিজ্ঞানের চর্চায় পারমাথিক সত্যের নাশের ভয় নেই, ভয় আছে শােধ মিথ্যাজ্ঞানের উচেছদের। যাঁরা মিথ্যাকে অাঁকড়ে ধরে রাখতে চান তাঁরাই শােধ বিজ্ঞানকে ডরান। পড়বে বলা হয়েছে যে, প্রাতিভাসিক সত্য হচেছ ভ্ৰমজ্ঞান। এ কথা শানে লোকের এই ধোঁকা লাগতে পারে যে, কি করে একই জ্ঞান যােগপৎ সত্য ও ভ্রম হতে পারে। প্রাতি ভাসিক সত্য যে এক হিসাবে সত্য আর-এক হিসাবে মিথ্যা, এর সপটে প্রমাণ আছে। সম্মিলনের সভাপতিমহাশয় যে-দটি উদাহরণ দিয়েছেন, তারই সাহায্যে প্রাতিভাসিক সত্যের সবরােপ নিৰ্ণয় করতে চেষটা করব। সন্য পথিবীর চার দিকে ঘরছে, এটি হচ্ছে প্রতিভাসিক সত্য ; আর পথিবী যে সহযোির চার দিকে ঘরছে, এটি হচেছ, বৈজ্ঞানিক সত্য। পথিবী চ্যাপটা, এটি হচেছ প্রাতিভাসিক সত্য ; আর পথিবী গোলাকার, এটি হচেছ বৈজ্ঞানিক সত্য। পথিবী চ্যাপটা ও সহযোির যে উদয়াস্ত হয়, এ দটিই হচেছ প্রত্যক্ষ সত্য, অর্থাৎ আমাদের চোখের পক্ষে ও আমাদের চলাফেরার পক্ষে সম্পণে সত্য। যতখানি জমি বাংলাদেশে চোখে দেখা যায় তা যে সমতল, এর চাইতে খাঁটি সত্য আর নেই। সতরাং পথিবীর যে খন্ডদেশ আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ, তা চ্যাপটা, গোলাকার নয়। সমগ্র পথিবীটি গোলাকার, কিন্তু সমগ্র পথিবীটি প্রত্যক্ষ নয়। আমরা যখন প্রত্যক্ষের সীমা লঙ্ঘন করে অপ্রত্যক্ষের বিষয় প্রত্যক্ষ জ্ঞানের সাহায্যে জানতে চাই, তখনই আমরা ভ্ৰমে পড়ি। কারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান হচেছ সমষ্টিটির জ্ঞান, অসংখ্য খন্ড খণ্ডড প্রত্যক্ষ জ্ঞানের যোগাযোগ করে সে জ্ঞান পাওয়া যায়। অসংখ্য চ্যাপিটা খন্ডকে ঠিক দিলে তা গোল হয়ে ওঠে। এক মহতে একদেশদর্শিতাই হচেছ প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ধম, সতরাং কোনো একটি বিশেষ প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উপর নিভয়ে বৈজ্ঞানিক সত্যকে দাঁড় করানো যায় না। ইন্দ্রিয় বাহ্যবস্তুর যে পরিচয় দেয়, সাধারণত মানষে তাই নিয়েই সন্তুট থাকে,