পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যািসন্মিলন G6 শািন্ধ রূপকথা নয়, সেইসঙ্গে কথার মোেহও আমাদের ত্যাগ করতে হবে ; অর্থাৎ যথাৰ্থ ইতিহাস রচনা করতে হলে সে রচনায় ‘শব্দের লালিতা, বর্ণনার মাধয, ভাষার চাতুয* পরিহার করতে হবে। এক কথায় শ্রীহৰ্ষচরিত আর কাদম্বরীর ভাষায় লেখা চলবে নয়। এ কথা অবশ্য অক্ষরে অক্ষরে সত্য। কিন্তু কি কারণে অক্ষয়বাব অপরকে যে-উপদেশ দিয়েছেন নিজে সে-উপদেশ অনসরণ করেন নি তা ঠিক বঝতে পারলাম না। কারণ তাঁর অভিভাষণের ভাষা যে ‘অক্ষর-ডম্বর, এ কথা টাউন হলে সশরীরে উপস্থিত থাকলে স্বয়ং বাণভট্টও স্বীকার করতেন। সম্পভবত অক্ষয়বাবর মতে ইতিহাসের আখ্যান হচেছ বিজ্ঞান, আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যাখ্যান হচেছ কাব্য। 8 যে লোভ অক্ষয়বাব সংবরণ করতে পারেন নি, শ্রীযন্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্ৰী মহাশয় তা সম্পণে উপেক্ষা করেছেন। শাস্ত্রীমহাশয় আগাগোড়া অশাস্ত্রীয় ভাষা ব্যবহার করায় তাঁর অভিভাষণ এতই জলের মতো সহজ হয়েছে যে, তা এক নিশবাসে নিঃ.ে করা যায়। এ শ্রেণীর লেখা যে বহতা নদীর জলের মতোই সবচছ ও ঠান্ডা হওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। জলের মতো ভাষার বিশেষ গণ এই যে, তা জ্ঞানপিপাসদের তৃষ্ণা সহজেই নিবারণ করে। বর্ণ-গন্ধ চাই শােধ কাব্যের ভাষায়, কেননা তা হয় অমত নয় সরা। আমি বহকাল হতে এই কথা বলে আসছি যে, বাংলা সাহিত্য বাংলা ভাষাতেই রচিত হওয়া উচিত। কিন্তু এই সহজ কথাটি অনেকের কাছে এতই দিবোধগ'ঠেকে যে, তাঁরা এরােপ আজগবি কথা শানে বিরক্ত হন। এদের মতে বাংলা হচেছ আমাদের আটপৌরে ভাষা, তাতে সাহিত্যের ভদ্রতা রক্ষা হয় না। সতরাং সাহিত্যের জন্য সাধভাষা নামক একটি পোশাকি ভাষা তৈরি করা চাই। পোশাক যখন চাইই, তখন তা যত ভারী আর যত জমকালো হয় ততই ভালো। তাই সাহিত্যিকরা সংস্কৃত ভাষার চোরা-জরিতে কিংখাব বনতে এতই ব্যগ্র ও এতই ব্যস্ত যে, সে জাঁর সােচচা কি ঝাঁটা, তা দিয়ে তাঁরা কিংখাব দরে থাক দোসীতিও বনতে পারেন। কি না, পারলেও সে বনানিতে ঐ জরি খাপ খায় কি না, এ-সব বিচার করবার তাঁদের সময় নেই। সতরাং বাংলা লিখতে বললে তাঁরা মনে করেন। যে, আমরা তাঁদের কাব্যের বস্ত্রহরণ করতে উদ্যত হয়েছি। কিন্তু আমরা যে ওরােপ কোনো গাঁহােত আচরণ করতে চাই নে, তার প্রমাণ, ভাষা ভাবের লতাজা নিবারণ করবার জিনিস নয়। ভাষা বস্ত্র নয়, ভাবের দেহা ; আলংকারিকদের ভাষায় যাকে বলে 'কাব্যশরীর’। বাঙালির ভাষা বাঙালি চৈতন্যের অধিস্ঠিান। বাঙালির আত্মাকে সংস্কৃত ভাষার দেহে কেউ প্রবেশ করিয়ে দিলে ব্যাড়ীর আত্মা নন্দ-ভূপতির দেহে প্রবেশ করে যেরপ দদশাগ্ৰস্ত হয়েছিল। সেইরূপ হবারই সম্পভাবনা। দরিদ্র ব্ৰাহ্মণের আত্মা রাজার দেহে প্রবেশ করায় তার যে কি পৰ্যন্ত দগতি হয়েছিল তার বিস্তৃত ইতিহাস কথাসরিৎসাগরে দেখতে পাবেন। বাঙালির স্কুলে-পড়ানো আত্মা