পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিভাষণ CACA পেয়াদা পাঠাইয়া হাল যোয়াল ফাল হালিয়া বলদ দামড়া গর, বছর বকনা। কাঁথা পাতরা চুপড়িী কুলা ধচনৗপর্যন্ত বেচিয়া গোবাড়িয়া করিয়৷ পিটিয়া সবসব লয়। মহাজনের দশগণ সদা দিয়াও মািল আদায় করিতে পারি না কতো বা সাধ্য সাধনা করি হাতে ধরি পায় পড়ি হাত জড়ি দাঁতে কুটা করি। হে ঈশবর দঃখির উপরেই দঃখ, ওরে পোস্ত্ৰ বিধাতা আমাদের কপালে এত দঃখ লেখিস তোর কি ভাতের পাতে আমরাই ছাই দিয়াছি। এ ভাষা অসমদীয় ভাষা হউক আর না হউক, ইহা যে খাঁটি বাংলা সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। এ ভাষা সজীব সতেজ সরল স্বচ্ছন্দ ও সরস। ইহার গতি মন্ত, ইহার শরীরে লেশমাত্র জড়তা নাই। এবং এ ভাষা যে সাহিত্যরচনার উপযোগী, উপরোক্ত নমনাই তাহার প্রমাণ। এই ভাষার গণেই বিদ্যালংকােরমহাশয়ের রচিত পল্লিচিত্র পাঠকের চোখের সম্মখে ফাটিয়া উঠে। এ বর্ণনাটি সাধভাষায় অন্যবাদ কর, ছবিটি অস্পষ্ট হইয়া যাইবে। অপর পক্ষে বিদ্যালংকােরমহাশয়ের ভাষা সম্পবন্ধে পবোদােন্ধত উক্তিটি ভাষায় অন্যবাদ কর, তাঁহার বক্তব্য কথা সম্পপাল্ট হইয়া আসবে। আমার বিশ্ববাস, আমাদের পবিবতী লেখকেরা যদি বিদ্যালংকারমহাশয়ের রচনার এই বঙ্গীয় রীতি অবলম্ববন করতেন তাহা হইলে কালক্ৰমে এই ভাষা সদসংস্কৃত এবং পল্ট হইয়া আমাদের সাহিত্যের শ্ৰী বদ্ধি করিত। কিন্তু তাহারা বিদ্যালংকারমহাশয়ের গৌড়ীয় রীতিকেই গ্রাহ্য করিয়া তাহাকে সহজবোধ্য করিবার চেংটা করিয়াছেন। পন্ডিতগণের তান্ত দায় আমরা উত্তরাধিকারীসত্বত্বে লাভ করিয়া অদ্যাপি তাঁহাই ভোগদখল করিয়া আসিতেছি। প্ৰবোধচন্দ্রকার তৃতীখা স্তবকের কুসমগলি মেঠো হইলেও স্বদেশী ফল। আর প্রথম স্তবকের কুসমগলি শােধ কাগজের নয়, তুলোট কাগজের ফল। আবাদ করিতে জানিলে কাঠগোলাপ বসরাই গোলাপে পরিণত হয়। কিন্তু কালের কবলে ছিন্নভিন্ন বিবৰ্ণ হওয়া ব্যতীত কাগজের ফলের গত্যন্তর নাই। Գ কাহারো কাহারো বিশবাস যে, এই দই ভাষার মিলনস্যুত্রেই বতমান সাধভাষা জন্মলাভ করিয়াছে। কিন্তু আমার ধারণা অন্যরােপ। বণে ও গঠনে এই দই ভাষা সম্পপণ্য পথিক জাতীয়, সতরাং ইহাদের যোগাযোগে কোনোরপ নািতন পদার্থের সন্টি হওয়া অসম্পভব। বহকাল যাবৎ এ দই পদ্ধতি সম্পপণ স্বতন্ত্র ভাবেই চৰ্চা করা হইয়াছিল। একের পরিণতি কালী সিংহ মহাশয়ের মহাভারতে, অপরের পরিণতি তাঁহার হতোম প্যাঁচার নকশায়। ইহার কারণও পািট। হতোমি ভাষায় মহাভারত অন্যবাদ করা মািখতা এবং মহাভারতের ভাষায় সামাজিক নকশা রচনা করা ছন্নতা মাত্র। যে ভাষা আসলে এক, জোর কারিয়া তাহাকে দই ভাগে বিভক্ত করিয়া এই দই ভাষা রচিত হয়। সে ভাঙা জোড়া লাগাইবার চেষ্টা ব্যথা। আমাদের মৌখিক ভাষা নিছক চাষার ভাষাও নলে, নিটোল সংস্কৃতও নহে। আমাদের মখের ভাষায় বহু তৎসম শব্দ এবং বহ, তদভব শব্দ আছে। দেশীয় শব্দও যে নাই তােহা নহে,